বাংলা ক্যালেন্ডার শেষ পাতায় এসে ঠেকেছে। চৈত্র সংক্রান্তির বাকি হাতে গোনা কটা দিন। তাই ব্যস্ততার শেষ নেই পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষ্ণদেবপুরে। সেখানে এখন সাজসাজ রব। বাংলার অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় লোক উৎসব ‘গাজন’কে কেন্দ্র করে মেতে উঠছেন আট থেকে আশি। বাংলার ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির হাত ধরে প্রতি বছর নিয়ম করে চৈত্র মাসের শেষ দুই সপ্তাহব্যাপী কৃষ্ণদেবপুরে পালিত হয় গাজন উৎসব। জনশ্রুতি আছে, গাজনের সময় শিবের সঙ্গে হরকালীর বিবাহ সম্পন্ন হয়। আর বিবাহ উৎসবে সন্ন্যাসীরা বরযাত্রী হিসেবে অংশ নেন। শিব-দুর্গা ছাড়াও এটি নীল, মনসা ও ধর্মঠাকুরের পূজাকেন্দ্রিক উৎসব। সন্ন্যাসী বা ভক্তদের মাধ্যমে শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। আর চৈত্রের সংক্রান্তিতে স্থানীয় হাইস্কুল মাঠে চড়ক পুজো ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেইসঙ্গে এই প্রাচীন উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
গাজনের সন্ন্যাসী বা ভক্তরা নিজেদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে যন্ত্রণা দিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ইষ্ট দেবতাকে খুশী করার চেষ্টা করেন। উৎসব উপলক্ষে শিবের নানা লৌকিক ছড়া আবৃত্তি ও গান করা হয়। অনুষ্ঠিত হয় প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে বিভিন্ন পালাগান। গাজনে দু’জন সন্ন্যাসী শিব ও গৌরী সেজে এবং অন্যান্যরা নন্দী, ভৃঙ্গী, ভূতপ্রেত, দৈত্যদানব প্রভৃতির সং সেজে নৃত্য করতে থাকেন। এছাড়া শ্রীকৃষ্ণ, রাধিকা ও তাঁর সখীরাও থাকেন সংয়ের সাজে।
পূর্ব বর্ধমানের পরিচিত শহর কালনা থেকে ৮কিলোমিটার দূরে এই কৃষ্ণদেবপুরের অবস্থান। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সেখানে কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম হয়। আশেপাশের গ্রামের মানুষজনও হাজির হন। কৃষ্ণদেবপুর ছাড়াও পূর্ব বর্ধমানের কুরমুন গ্রামেও গাজন উৎসব পালন করা হয়।
ছবি সৌজন্যেঃ কৌশিক ব্যানার্জী
Facebook Comments