বীরভূমের ফুলিডাঙ্গা গ্রাম । এই গ্রামেই মা মনসা সাত বোন সহ বাস করেন দেবাংশীদের প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে । প্রায় ৭০০ বছর আগে নীলচাষের ৫২ বিঘার দীঘি থেকে ৭ বোনকে স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে একে একে বংশ পরম্পরায় মা মনসাকে প্রতিষ্ঠিত করেন, এরপর থেকে সারাবছরই বিভিন্ন তিথি অনুযায়ী মা-এর পূজা হয়, এছাড়া নিত্য পূজা হয় ১২মাস। স্বপ্নাদেশে মূল্য ছাড়া ঢাকি মা-এর কাছে নিত্য ঢাক বাজায়, এই মা খুব জাগ্রত, মা-এর কাছে এসে কেউ বিফল হয়ে ফেরত যান না, স্থানীয় মুসলিমরাও মা কে খুব মানেন। স্থানীয় অঞ্চলে বিয়ের সময় মা মনসাকে ছুঁয়েই তবে সেই হলুদে বিয়ে হয়, এই প্রথা বামাক্ষেপার পরিবারও মানেন । তাছাড়া গাছের প্রথম ফল ও সবজি আগে মা-এর চরণে ওই অঞ্চলের মানুষ নিবেদন করেন।
ভাদ্র মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে মহা সমারোহে মায়ের আবির্ভাব তিথি পালন করা হয় । এই পূজানুষ্ঠানের নাম বগাপঞ্চমী। আগের দিন ছেলেরা ক্ষৌরকার্য সমাধান করার পর স্নান করে বাড়ির সবাই নিরামিষ আহার করেন। আর মায়ের অধিবাস হয় এই দিনে । মাকে সন্ধারতির পর চারপ্রহরে চার বার পূজা হয়। এরপর ভোর ৪টে মাকে স্নান করানো হয়, তারপর দর্শনার্থী ও ভক্তদের জন্য মায়ের মন্দির খোলা হয় ।
হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে তখন এই মন্দিরে । মন্দির চত্বরকে ঘিরে বসে যায় মেলা, মিষ্টির দোকান, ফুলমালার দোকান, খেলনা, নাগরদোলা, লটারি সব কিছুই । সাথে বিশাল লাইন মাকে দর্শন করার ও পুজো দেওয়ার জন্য। ১১টার পর নাটমন্দিরে শুরু হয় মহাযজ্ঞ । ঘিয়ের আগুনের প্রজ্বলিত লেলিহান শিখা সব কিছু যেন শুদ্ধ করে দেয় । যজ্ঞের সামনে মায়ের উদ্দেশ্যে নিবেদিত ছাগদের ও পুকুরে স্নান করিয়ে সিঁদুর পরিয়ে শুদ্ধ করে নেওয়া হয়, এবং যজ্ঞ শেষে অসংখ্য ছাগ বলি হয়। অনেকের মানষিকের ছাগ ও বলি হয় ।
এরপর মন্দিরে সাতজনের মধ্যে দুই মা কে গর্ভগৃহে থেকে বের করে এনে পূর্ব নির্দিষ্ট দুই ব্যক্তির মাথায় স্থাপন করা হয় ও মন্দিরের পিছনে অশ্বত্থ গাছকে বেষ্টন করে ৯ জন উপোষী এও ও ঢাক ঢোল শঙ্খ ধ্বনির মাধ্যমে দুই মা কে নিয়ে গাছকে ৭বার প্রদক্ষিণ করেন। এরপর নিৰ্দিষ্ট ৭ গ্রাম ঘুরে যে দীঘি থেকে মা উঠেছেন সেই দীঘিতে অৱস্থিত আর এক বোনের সাথে মিলিত হন। তারপর ওই দিনের মতো মা মন্দিরে ফিরে আসেন । রাতে ভক্তগণ প্রসাদ ভক্ষণ করে বাড়ি ফেরেন ।
পরের দিন খুব সকালে দুই মা আবার বেরোন তারাপীঠ সংলগ্ন নির্দিষ্ট গ্রামগুলোতে, মাঝে তারামায়ের মন্দিরে এসে তারা মায়ের পাশে বসে দেখাও করেন । তারামা ও এই দুই মনসা মায়ের জন্য ভোগ না খেয়েই অপেক্ষা করেন । এরপর পুরো পান্ডাপাড়ার পুরুষ, মহিলা মায়ের পুজো করেন তারামায়ের যজ্ঞ দালানে । ফুলমালা শাড়ির পাহাড় জমে যায়। এবার মনসা মাদ্বয় তারামায়ের সঞ্জীবনী পুকুরে স্নান করে মাকে দর্শন করে আবার নির্দিষ্ট কিছু স্থানে মা যান অবশেষে বিকেলে মা ফিরে আসেন । এই ফেরার আগে বেশ কিছু মানুষ মায়ের কাছে তাদের অনেক আকাঙ্খিত কিছু চেয়ে নেওয়ার জন্য সকাল থেকে উপোষ করে পুকুরে ডুব দিয়ে সারি সারি ভাবে শুয়ে পরে, আর মা মাথায় চেপে আসার পথে এই মানুষ গুলোর সুস্থ ও উপকৃত হওয়ার রাস্তা নিজে মুখে বলে দেন । এরপর মা মন্দিরে ফেরেন । শুরু হয় আবার বলি, ও সন্ধারতি । সাথে সন্ধ্যার পর চলে ১৫ দিন ধরে মায়ের গান । রাতে আবার প্রসাদ বিতরণ হয় এই ভাবে শেষ হয় বগাপঞ্চমী ।
কিভাবে যাবেন : তারাপীঠ থেকে টোটো বা রিক্সা অথবা হেঁটেও যাওয়া যায়। তারাপীঠ থেকে ১কিমি দূরে ফুলিডাঙ্গা গ্রামে এই মন্দির। যে কোনো দিন যাওয়া যায় । এখানকার পুরোহিত দেবাংশী পিন্টু ফোন: ৯৪৭৫৯৮৬৮৫৩।
নিজস্ব চিত্র
Facebook Comments