🇵🇰পাকিস্তানে ব্লাসফেমির নামে পাঁচটি গির্জায় আগুন

পাকিস্তানে বুধবার কোরআন অবমাননার নামে পাঁচটি গির্জায় আগুন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং হামলার তদন্তের আহ্বান জানায়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ধর্মের নামে সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংসতা পাকিস্তানে নতুন কিছু নয়। ব্লাসফেমির নামে সহিংসতার মতো ঘটনা এখানে প্রায়ই সামনে আসে। বুধবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ফয়জালাবাদ শহরের জরানওয়ালা এলাকায় এমনই কিছু ঘটনা সামনে এসেছে। এখানে কোরান অবমাননার নামে জনতা পাঁচটি গির্জা ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ।

শুধু তাই নয়, চার্চের আশেপাশে বসবাসকারী লোকজনের বাড়িঘর জ্বালিয়ে, মারধর ও লুটপাট করে। এ সময় পুলিশও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল, যারা ছিল দর্শক। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং চামরা মান্ডি জারানওয়ালায় বসবাসকারী খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে পাকিস্তান রেঞ্জার্সকে ডাকা হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন যে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে পাকিস্তানে গীর্জা এবং বাড়িগুলিকে লক্ষ্যবস্তুতে কোরানের অবমাননার প্রতিক্রিয়ায়। তিনি বলেছিলেন যে আমেরিকা স্বাধীন মতপ্রকাশকে সমর্থন করে, তবে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকিকে প্রকাশের ধরণ হিসাবে মেনে নিতে পারে না।
প্যাটেল পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে এসব ঘটনা তদন্ত করার আহ্বান জানান এবং জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান।

তথ্য অনুযায়ী, জনতা প্রথমে অভিযোগ করে যে গির্জা ইসলাম বিরোধী কথা বলে, তারপর কোরানের অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পরে জনতা পেট্রোল বোমা এবং পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে পাঁচটি গির্জা ধ্বংস করে, তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করার অভিযোগে। একই সঙ্গে এতেও থেমে থাকেনি ভিড়। হামলাকারীরা খ্রিস্টান বাসিন্দাদের বাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, তাদের বাড়িঘর লুটপাট ও লুটপাট করে। এসময় কেউ প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে তাকে লাঠি, লাঠি, লাথি ও ঘুষি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়।

এই ঘটনার অনেক ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর মধ্যে, লোকেরা গীর্জা পোড়ানোর কথা বলছে, তাদের ধর্মবিশ্বাসের স্থান বলছে। শুধু তাই নয়, গির্জার লোকজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার কথাও বলছেন অনেকে। ভাইরাল ভিডিওতে আরও দেখা যাচ্ছে যে ঘটনাস্থলে অনেক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন, যারা সেখানে দাঁড়িয়ে বাসটি দেখছিলেন।

ফয়সালাবাদের সহকারী কমিশনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাকিস্তান রেঞ্জার্সকে ডেকেছেন। পাঞ্জাব স্বরাষ্ট্র দফতরকে একটি চিঠিতে তিনি বলেছিলেন যে এলাকায় পুলিশের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং দুর্বল। এমন পরিস্থিতিতে, জরানওয়ালা তহসিল ফয়সালাবাদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেঞ্জার্সের কমপক্ষে দুটি কোম্পানি পাঠানোর জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে।

পাঞ্জাবের পুলিশ প্রধান উসমান আনোয়ার বলেছেন, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং এলাকাটি ঘিরে রাখা হয়েছে। পাকিস্তানের চার্চের প্রধান বিশপ আজাদ মার্শাল বলেন, এরপর আর কিছু বলার সাহস অবশিষ্ট নেই। এই মর্মান্তিক ঘটনা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। গির্জা পোড়ানো হচ্ছে। খ্রিস্টানরা বাইবেলকে টুকরো টুকরো এবং কুরআন অপবিত্র করার মিথ্যা অভিযোগ করে নির্যাতিত হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ফোকাস পাকিস্তানের প্রধান নাভিদ ওয়াল্টার বলেছেন, আমরা সরকার, আদালত এবং পুলিশের কাছে ন্যায়বিচার ও পদক্ষেপ দাবি করছি। সংখ্যালঘুদের অবিলম্বে সুরক্ষা দেওয়া উচিত এবং তাদের আশ্বস্ত করা উচিত যে তারা যে দেশের স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন পূর্ণ আনন্দের সাথে উদযাপন করেছে, তারা তাদের নিজেদের হিসাবে বিবেচনা করে। ওয়াল্টার বলেন, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যা ২৩ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ভাবার বিষয়, কেন এমন হলো?

পাকিস্তানে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর নৃশংসতা আসলে সেখানকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি অংশ। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল, ১৯৭৩ সালে যখন সংবিধান প্রণীত হয়েছিল, তখন এর 2 অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল যে ইসলাম হবে রাষ্ট্রধর্ম। এর পরে, অনুচ্ছেদ 41(2) এ ঘোষণা করা হয়েছে যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি শুধুমাত্র একজন মুসলিম হবেন। একই সঙ্গে ৯১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। এই প্রক্রিয়া এখানেই থেমে থাকেনি, তবে 1980-এর দশকে পাকিস্তানের সংবিধানে বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়েছিল, এই সময়ে ধর্মবিশ্বাস আইন আনা হয়েছিল, যার কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লক্ষ লক্ষ লোক হয় হত্যা করা হয়েছিল, বা ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছে।

সূত্রঃ jagran
ছবিঃ সংগৃহিত