শনিবার ভারতের ইডেনে গার্ডেন্সে নেদারল্যান্ডসের দেয়া ২৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গুটিয়ে গেল ৪২.২ ওভারে ১৪২ রানে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ম্যাচে ডাচদের জয় ৮৭ রানে।
এই হারে সেমিফাইনাল স্বপ্ন ভণ্ডল হলো টাইগারদের। যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশ ছেড়েছিল দল, তা এখানেই শেষ। অবশ্য শেষ চারের আশা আগের ম্যাচেই ছেড়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু ভুলেও হয়তো ভাবেননি নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে এই ঘোষণা শুনতে হবে।
টসে জিতে বাংলাদেশকে ২৩০ রানের লক্ষ্য দেয় নেদারল্যান্ডস। দেখে-শুনে খেললে অনায়াসেই লক্ষ্য পাড়ি দেয়ার কথা। তবে ওপেনারদের ব্যর্থতা সহজ সমীকরণও কঠিন করে তোলে। ৪.২ ওভারে দলীয় ১৯ রানে লিটন দাসের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আরিয়ান দত্তের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি।
কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই পরের ওভারে ফেরেন আরেক ওপেনার তানজিদ তামিম। ১৬ বলে ১৫ রানে ভেন বিকের শিকার হন এই তরুণ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ। মেহেদী মিরাজ ও নাজমুল শান্তের প্রতিরোধে আর কোনো বিপদ ছাড়াই শেষ হয় পাওয়ার প্লে।
এরপরই দৃশ্যপটে আসেন পল ভ্যান মিকিরেন। ডাচ এই বোলারের কোনো জবাবই যেন ছিল না কারো কাছে। প্রথমে ফেরান নাজমুল হোসেন শান্তকে। নিজেকে হারিয়ে খোঁজা এই ব্যাটার এদিন আউট হন ১৮ বলে মাত্র ৯ রানে। সব মিলিয়ে এই আসরে ৬ ম্যাচে ৮৩ রান তার। যেখানে প্রথম ম্যাচেই করেছিলেন ৫৯।
এর কিছু সময় পরে শান্তর পথ ধরেন অধিনায়ক সাকিবও। তিনিও শিকার মিকিরেনের। ভুলে যাওয়ার মতো বিশ্বকাপ কাটাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। ব্যর্থ আজও। ফিরেছেন ১৪ বলে ৫ রান করে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০ রানের ইনিংস ছাড়া বলার মতো স্কোর নেই বাংলাদেশ অধিনায়কের। ৫ ম্যাচে রান মোটে ৬১।
সাকিব-শান্তের বিদায়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। যা আরো বাড়িয়ে দেয় মিরাজের উইকেট। শুরু থেকে দারুণ খেলতে থাকা মিরাজ ফেরেন ৪০ বলে ৩৫ রানে। পরের ওভারেই বিদায় মুশফিকুর রহিমের। দলের প্রয়োজনে হাল ধরতে পারেননি তিনি। ফেরেন ৫ বলে ১ রান করে। ১৭.৪ ওভারে ৭০ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
ততক্ষণে হার অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। তবুও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও শেখ মেহেদী জুটি চেষ্টা চালান। তবে ৩৮ রানের বেশি আসেনি যুগলবন্দী থেকে। মেহেদী ৩৮ বলে ১৭ ও রিয়াদ ফেরেন ৪১ বলে ২০ রান করে। ২০ রান করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তাসকিনের ব্যাটে আসে ১১ রান।
এর আগে বোলিং ইনিংস জুড়ে একের পর এক ক্যাচ মিস করেন মুশফিক-লিটনরা। দেখে মনে হবে, যেন চলছিল ক্যাচ মিসের মহড়া। যার সুযোগ বেশ ভালোভাবেই নেয় নেদারল্যান্ডস। ৬৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও ২২৯ রানের পুঁজি পায় ডাচরা।
ইডেন গার্ডেনে ৩৩ বছর পর ওয়ানডে খেলতে নেমে শুরুতেই নেদারল্যান্ডসকে কাঁপিয়ে দেন পেসাররা। মাত্র ৪ রানে জোড়া উইকেট তুলে জোর ধাক্কা দেন তাদের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সূচনা আনেন তাসকিন। বিক্রমজিৎ ফেরেন ৩ রানে। পরের ওভারেই আঘাত করেন শরিফুল। ম্যাক্স ও ডাউডকে ফেরান ০ রানে।
তবে ধাক্কা সামলে নেদারল্যান্ডস ঘুরে দাঁড়ায় তৃতীয় উইকেট জুটিতে। সামনে থেকে পথ দেখান ওয়েসলি বারেসি। কলিন একারম্যানকে নিয়ে গড়েন দারুণ এক জুটি। ৫৯ রান আসে যুগলবন্দীতে।
১৪তম ওভারে এসে হয় তৃতীয় উইকেটের পতন। ফিরেন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা বারেসি। মোস্তাফিজের বল আকাশে ভাসিয়ে সাকিবকে ক্যাচ দেন তিনি, আউট হওয়ার আগে ব্যাটে আসে ৪১ বলে ৪১ রান।
পরের ওভারেও আবার সাকিব-মোস্তাফিজ। এবার সাকিবের বলে ক্যাচ নেন মোস্তাফিজ। ৩৩ বলে ১৫ করে ফেরেন একারম্যান।
১৬তম ওভারে এসে দুটি সুযোগ তৈরি করেন মোস্তাফিজ। তবে পরপর দুই বলে ক্যাচ মিস করেন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। সুযোগটা বেশ ভালোই কাজে লাগান ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। তুলে নেন ফিফটি। শেষ পর্যন্ত আউট হন ৪৪.৩ ওভারে, দলীয় ১৮৫ রানে। মোস্তাফিজের শিকার হওয়ার আগে মাঝে আরো একবার জীবন পান স্কট। আউট হন ৮৯ বলে ৬৮ রান করে।
অবশ্য দলকে একটা অবস্থানে পৌঁছে দেন স্কট। বাস ডি লিডেলে সাথে নিয়ে ৪৪ ও এঞ্জেলবার্চের সাথে গড়েন ৭৮ রানের জুটি। টাইগার বোলারদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে ৬১ বলে ৩৫ রান করেন এঞ্জেলবার্চ। শেষ ওভারে সাকিব শেখ মেহেদীকে বোলিংয়ে আনলে ১৭ রান তুলে লুগান ভেন বিক অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ২৩ রানে।
বল হাতে মোস্তাফিজ, তাসকিন ও শরিফুল নেন দুটি করে উইকেট।
Facebook Comments