আবেগ ও ময়দান। চোখ বন্ধ করে ভাবলে কোথাও যেনো ময়দান ও আবেগ এক হয়ে যায়। ময়দানের প্রতি আবেগ বাঙালির রক্তে মিশে আছে দশকের পর দশক। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পাল্টায় কিন্তু রক্তে আবেগের ঝাঁজ পাল্টায় না।
গতকাল ছিলো ময়দানে, মোহনবাগান মাঠে প্রথমবারের জন্য আইলিগের খেলা। শুক্রবার, ভর দুপুরে খেলা। ময়দানে ধুলো উড়ছে, সমর্থকরা আসছেন দলে দলে। রেড রোডে গাড়ির গতি থমকে গেছে, সমর্থকরা আসছেন দলে দলে।ট্রেনে,বাসে,মেট্রোয় ঝুলন্ত ভিড়, সমর্থকরা আসছেন দলে দলে। স্লোগানে স্লোগানে কান পাতা দায়, না! কোনো রাজনৈতিক দলের মিটিং নয়, সমর্থকরা আসছেন দলে দলে। সমর্থক, এদের ধর্ম হয়না, গায়ের রঙ দিয়ে বিচার হয়না, গরিব বড়লোক হয়না, শুধু হয় একটাই পরিচয় তারা জাতীয় ক্লাবের সমর্থক। তাই তো সাংসারিক মোহমায়া ত্যাগ করা সাধুও মোহনবাগানের মায়া ত্যাগ করতে পারেন না। কর্পোরেট অফিসের স্যুটেড বুটেট বাবুও রিক্সাওয়ালার পাশে বসে খেলা দেখতে ইতস্তত বোধ করেন না। বাড়ির গিন্নি এসেছেন কর্তার সাথে মাঠে, সাথের টিফিন কৌটোতে রয়েছে রুটি আর ঝোলা গুড়। ওই যে একদলে একসাথে খেলা দেখার সঙ্গী, মায়ের গর্ভের সহদর না হলেও ময়দানি সহদরদের জন্য।
খেলা চলছে, পাশ থেকে ফিসফিস করে আওয়াজ কানে এলো, “জি.এম আসলে বলিস আমার বউ এর শরীর খারাপ আমি হসপিটাল গেছি, আর হ্যাঁ শোন ভাই এক গোলে জিতছি, আজ জিতেই ফিরব।” আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, “অফিস পরে আগে খেলা।” ঝাঁকে ঝাঁকে নতুন প্রজন্মের কপোত কপোতীরা এসেছে মাঠে, তারা অনায়াসে পারত প্রিন্সেপ ঘাট বা কোনো শপিং মলের শীতল আস্তানায় যেতে। যাবেনা, বিশ্বাস করুন এদের মনে যে ময়দানি বীজ পোঁতা আছে, রক্তে দৌড়াচ্ছে ফুটবল।
“পাশ না ফেল তাড়াতাড়ি বলো, না না ভালো লাগছে না কিছু। ম্যাচ টা খুব টেনশনে চলছে।” – আর এক দাদার ফোনের এপ্রান্তের কথা শুনে আন্দাজ করা যায় যে গতকাল ছেলে বা মেয়ের রেসাল্ট ছিলো। তেমনি আরেক কিশোরকে পাওয়া গেলো যার সামনে উচ্চমাধ্যমিক কিন্তু ম্যাচের দিন তাকে বাড়ির লোক মাঠে পাঠাবেই, কারণ তার বাবা যে পক্ষাঘাতে বিছানায়, ছেলে না গেলে যে পরিবারের সম্মান বজায় থাকেনা।
বহু বছর পর ময়দানের সবুজ ঘাসেরা আজ হাসছে, বিদ্রুপ করে কোটি টাকার লিগকে বলছে, “তোরা টাকা ছড়িয়ে সমর্থক ভাড়া করতে পারবি। আবেগ কিনতে পারবি?” তাই এই ময়দানি আবেগের আন্দোলন আরো জোরালো হোক, “হোক কলরব”।
Photographs – Rainak Dutta
Facebook Comments