রক্ষণশীল হতে গিয়ে ভাষাকে অহেতুক কঠিন না করে, প্রচলিত শব্দ গ্রহণ করে বাংলাকে আরও সমৃদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শব্দকে বাংলা না করে, সেগুলো সরাসরি গ্রহণ করলে পারস্পরিক যোগাযোগ ও শিক্ষাপদ্ধতি সহজ হবে বলেও মনে করেন তিনি।
ঢাকার সেগুনবাগিচায় সোমবার দুপুরে মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সরকারপ্রধান এ কথা বলেন। করোনা মহামারির কারণে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন: চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মাতৃভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল। মূল প্রবন্ধটির ভূয়সী প্রশংসা করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু অধ্যাপক লাফিফা জামাল তার মূল প্রবন্ধে ‘কনটেন্ট’-এর পরিভাষা করেছেন ‘আধেয়’।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই আধেয় বললে কিন্তু আসলে অনেকে বুঝতেই পারবে না। কনটেন্ট বললে সবাই সহজভাবে বুঝবে।’
তিনি বলেন, ‘যে শব্দগুলো বহুল প্রচলিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত সেগুলো যে ভাষা থেকে আসুক, যেটা অধিক ব্যবহৃত আমাদের সেটাই গ্রহণ করতে হবে। সেখানে ওই পরিভাষা ব্যবহার করতে চেয়ে এরপর শেষে কোনো কিছুই বুঝব না, বলতে পারব না, সেটা যেন না হয়। কারণ, সব জায়গায় আমাদের প্রতিশব্দ করতে হবে বা পরিভাষা করতে হবে আমি ওইটা বিশ্বাস করি না।’
বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের এই সময়ে বিশ্বের অনেক ভাষার শব্দগুলো অন্য ভাষায় গ্রহণ করা হচ্ছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘৮ হাজারের ওপর বিদেশি শব্দ আমাদের বাংলা ভাষায় মিলে গেছে। কাজেই সে দিক থেকে আমি মনে করি যে ওই ব্যাপারে খুব বেশি কনজারভেটিভ না হয়ে, রক্ষণশীল না হয়ে প্রচলিত যে শব্দগুলো, প্রচলিত বিজ্ঞানের টার্মসগুলো দিয়ে কিন্তু বাংলা ভাষায় সহজভাবে বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা যেহেতু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, মাতৃভাষা সংরক্ষণ করা, মাতৃভাষার ওপর গবেষণা করা- সেটাও যেমন করবে সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষেত্রটাও দেখতে হবে যে, আমরা এই ভাষাকে কীভাবে মানুষের ব্যবহারের জন্য সহজলভ্য করা, সহজবোধ্য করা, সহজভাবে ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি। এ বিষয়গুলো নিয়ে কিন্তু গবেষণা করাও একান্তভাবে প্রয়োজন।’
Facebook Comments