ঝাড়গ্রাম জেলার চিল্কিগড় মুখরিত হলো মাটির টান যুক্ত আঞ্চলিক কবিতার অনুরণনে। “কবিতা হোক আমাদের জীবনের কথা/কবিতা হোক আমাদের জীবনের গল্প গাথা” এই ভাবনাকে পাথেয় করে ঝাড়গ্রাম জেলার জাম্বনী ব্লকের চিল্কিগড়ে রবিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হলো “আঞ্চলিক কবিতা পাঠের আসর”। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে অনেক ব্যস্ততার মাঝেও কিছু মানুষ আছেন যাঁরা নিজেদের কথা, মানুষের কথা কবিতায় লেখার জন্য কলম ধরেন। আঞ্চলিক ভাষায় তথা গ্রামীণ কথ্য ভাষায় সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলেন জীবনের চড়াই-উৎরাইয়ের হাজার কথা। যাঁদের অনেকের লেখা হয়তো এখনও সেভাবে প্রচার পায়নি। যাঁরা “গ্রাউন্ড জিরো”তে অবস্থান করে তাঁদের সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করা অভিজ্ঞতা দিয়ে জঙ্গল মহলের লোকসংস্কৃতি, গ্রামীণ বাংলার জীবনযাত্রা নিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় কবিতা লেখেন কিন্তু আড়ালে থেকে যান, সেইসব কবিদের নিজেদের মধ্যে আত্মিক যোগসূত্র ঘটিয়ে তাঁদের লেখাকে আধুনিক কবিতার সাথে মিলিয়ে দিতেই চিল্কিগড়ে বসেছিল আঞ্চলিক কবিতা পাঠের আসর। প্রকৃতির অকৃপণ দানে পরিপূর্ণ ঝাড়গ্রাম জেলাসহ গোটা সীমান্ত বাংলা। শাল, মহুয়া, পিয়ালের বন আর তার মাঝে বয়ে চলা ডুলুং, সুবর্ণরেখা, তারাফেনী আর তাদের দুইপাশে ছোট ছোট জনপদ। এহেন এক প্রকৃতির কোলে ছায়াঘেরা সুন্দর মনোরম স্থান ইতিহাস বিজড়িত চিল্কিগড়। সুপ্রাচীন কনক দুর্গা মন্দির। পাশ দিয়ে কুলু কুলু রবে বয়ে চলেছে ডুলুং নদী। ঠিক তার পাড়েই বসেছিল আঞ্চলিক কবিতা পাঠের আসর।
ঝাড়গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার নানান প্রান্ত থেকে নবীন-প্রবীণ কবিরা এসে উপস্থিত হয়েছিলেন কবিতাকে ভালোবেসে। সবাই নিজ নিজ এলাকার ভাষায় স্ব-রচিত কবিতা পাঠ করলেন। মূলত আঞ্চলিক কবিতাপাঠের আসর হলেও, কবিতাপাঠ হলো বাংলা, ইংরেজি, সাঁওতালী, কুড়মালি, সুবর্ণরৈখিক ভাষায়। পারস্পরিক ভাবনা আদান প্রদানের মাধ্যমে নিজেরা সবাই সমৃদ্ধ হলেন। বর্তমান সময়ে আঞ্চলিক ভাষায় রচিত কবিতাও যে জীবনের অনেক কথা বলে, এবং কবিতা গুলো সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ, সে কথা বারংবার উঠে এলো এদিনের আলাপচারিতায়। আলোচনায় উঠে এলো আঞ্চলিক কবিতা সাহিত্যের সাথে সারা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের সাহিত্যের একটা সেতুবন্ধন গড়ে তোলার চেষ্টাকে আরো গতি দিতে হবে। ঝাড়গ্রাম শহর ছাড়াও সাঁকরাইল, জামবনি, লালগড়, শিলদা, বেলপাহাড়ি, ফুলকুসমা, গোপীবল্লপুর, বিনপুর থেকে কবিরা এসেছিলেন। পাশাপাশি সুদূর হাওড়া ও পাশ্ববর্তী ঝাড়খন্ড রাজ্যের বহড়াগোড়া থেকেও কবি ও সাহিত্য প্রেমী মানুষেরা এসেছিলেন। আধুনিক কবিতা সাহিত্যের সাথে ভারতীয় সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে এই আসরে যোগদান করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কবি তথা নিউ আলিপুর কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ংগী, সাহিত্য গবেষক অভীক প্রধান, বিশিষ্ট কবি ও বাচিক শিল্পী দেবাশিষ দন্ড, কবি শাশ্বতী হোসেন, সৌমেন মন্ডল, আশুতোষ রানা, উপেন পাত্র, বঙ্কিম ভুই, আশীষ কুমার দত্ত, অর্ধেন্দু ত্রিপাঠী, প্রভঞ্জন মাহাত, মৌমিতা মন্ডল, খগেন জানা, অমর্ত্য পানি, অভিজিৎ খাঁ, পীযূষ কান্তি সিং, স্বপন পন্ডা, বাসুদেব ঘোষ, বিশাখা সরকার, অভিষেক রায়, নচিকেতা মাহাত সহ অন্যান্য উদীয়মান ও প্রতিষ্ঠিত কবিগণ। এদিনের অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হলো ঝাড়গ্রামের তরুণ গবেষক অভীক প্রধানের নতুন বই “আধুনিক বাংলা সাহিত্য – নানা বিষয় নানা ভাবনায়”। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা বাংলা সাহিত্য গবেষণায় নতুন দিকের উন্মোচন করবে এই বইটি।এদিনের অনুষ্ঠানে ব্যাপক সাড়া পেয়ে এদিনের অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা জয়দীপ ষড়ংগী ও অন্যতম আয়োজক সৌমেন মন্ডল জানান, অদূর ভবিষ্যতে তাঁরা ঝাড়গ্রামে একটি এই ধরণের অনুষ্ঠান বৃহৎ আকারে করার প্রচেষ্টা করবেন।
ছবি সৌজন্যে – সৌমেন মন্ডলের
Facebook Comments