ইউপিএ সরকারের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা পি চিদম্বরম। সরকারের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে ‘আইএনএক্স মিডিয়া’ নামে একটি সংস্থাকে ছাড়পত্র দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
যদিও পরবর্তীতে সেই মামলায় আদালতে নিজের আগাম জামিন আবেদন করলে বিচারক তা খারিজ করে দিলে তাৎক্ষনিক সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন পি চিদাম্বরাম। এসবের প্রেক্ষিতে বুধবার সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আর্থিক কেলেঙ্কারির দিক থেকে এটি একটি অসামান্য দিক। বিষয়টি প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বরাবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ এদিকে আদালতে পি চিদম্বরমের করা জামিন আবেদনে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের জন্য এই আবেদনটির অতি দ্রুত শুনানি করা হোক। একই সঙ্গে আবেদনটি যুক্তিগ্রাহ্য; কেননা অভিযুক্তের বিচারব্যবস্থা থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।’
এর আগে গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দিল্লির হাইকোর্ট থেকে পাঠানো গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়াতে সাবেক এই চিদাম্বরামের করা আগাম জামিন আবেদন খারিজ করা হয়। আদালতের বিচারপতি সুনীল গৌর বলেছেন, ‘এই মামলায় পি চিদম্বরমই হলেন প্রধান ষড়যন্ত্রকারী, তাই তার এই আগাম জামিন আবেদন নাকচ করে দেওয়া হচ্ছে।’
বিচারপতি গৌর আরও বলেন, ‘মামলার প্রধান বিষয়গুলো থেকে এটাই প্রমাণিত যে আবেদনকারী চিদাম্বরম এই মামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী।’ বিষয়টিকে কৌশলী অর্থ পাচারের একটি মামলা হিসেবে উল্লেখ করে আদালতে সুনীল গৌর বলেছিলেন, ‘মামলাটি যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এই ধরণের বড় মাপের অর্থনৈতিক অপরাধ চূড়ান্ত পরিকল্পনার মাধ্যমেই সম্ভব। যে কারণে এই মামলায় আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হলে সমাজের কাছে একটি ভুল বার্তা যাবে। তাই এখন আর তা সম্ভব নয়।’
অপর দিকে আদালতের এই অল্প সময়ের আদেশের মধ্যেই গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের ৬ কর্মকর্তার একটি দল দিল্লির দক্ষিণাঞ্চলীয় জোড় বাগে চিদাম্বরামের বাড়িতে হানা দেন। যদিও সেখানে গিয়েও দেখা মেলেনি তার; তবে এর কয়েক ঘণ্টা পর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেক্টেরও সিবিআইয়ের একটি দল এসে উপস্থিত হয়।
পরবর্তীতে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে চিদাম্বরামের বাড়ির সামনে এই মর্মে নোটিস দেওয়া হয় যে, ‘দেখা যাচ্ছে যে আপনি (চিদম্বরম) নিম্নে উল্লিখিত মামলার ঘটনা এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন, যা আমি (সিবিআই) এখন ফৌজদারি কার্যবিধির ১২ নম্বর অধ্যায়ের অধীনে তদন্ত করছি। আপনাকে নোটিস দেওয়া হচ্ছে যে মামলার তদন্তের স্বার্থে এটি প্রাপ্তির দুই ঘণ্টার মধ্যে আমার (সিবিআই) সামনে উপস্থিত হতে হবে।’
যার প্রেক্ষিতে বুধবার সকালেই পি চিদম্বরমের আইনজীবী সিবিআইয়ের কাছে জানতে চান যে ভারতের বর্ষীয়ান এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে কোন আইনের অধীনে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১০ সাল থেকে। সে সময় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এই পি চিদাম্বরম। অনেকের দাবি, তখন গুজরাট রাজ্যের একটি ভুয়ো এনকাউন্টার সংক্রান্ত মামলায় পি চিদম্বরমের সরাসরি নির্দেশেই গ্রেফতার করা হয় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের অভিযোগ, ২০০৫ সালে অমিত শাহ গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সোহরাবুদ্দিন শেখ নামে এক দুস্কৃতিকারী, তার স্ত্রী এবং সাক্ষী থাকা এক বন্ধুকে বিচার ব্যবস্থার আওতার বাইরে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও এতে তার জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় পরবর্তীতে অমিত শাহকে মুক্তি দিয়ে দেন আদালত।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নিজের এক ট্যুইটে বার্তায় বলেন, ‘রাজ্যসভার একজন অত্যন্ত যোগ্য ও সম্মানিত সদস্য পি চিদম্বরম; তিনি সরকারের অর্থমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন গত কয়েক দশক যাবত অতি বিশ্বস্ততার সঙ্গে দেশের সেবা করে গেছেন।’
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আরও বলেন, ‘তিনি (চিদম্বরম) নির্দ্বিধায় ক্ষমতাসীন সরকার প্রসঙ্গে সত্যি কথা বলেছেন এবং যার ব্যর্থতাও প্রকাশ করেছেন। তবে সত্যি সব সময়েই কাপুরুষদের পক্ষে অসুবিধাজনক হয়; তাই তাকে লজ্জাজনকভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার করা হচ্ছে। আমরা অতীতের মতো এবারও তার পাশে দাঁড়িয়েছি এবং পরিণতি যা-ই হোক না কেন সত্যের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব।’
Facebook Comments