শুক্রবার রাতে রাশিয়ার ক্রেস্তোভস্কি স্টেডিয়ামে আসরের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ে পেনাল্টি শুটআউটে ৩-১ ব্যবধানে জিতেছে স্পেন। নির্ধারিত সময় শেষে ১-১ গোলে সমতা বিরাজ করায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় খেলা। তাতেও ফল না আসায় পেনাল্টি শুট-আউটে নির্ধারিত হয় বিজয়ী দল। সুইসদের বিপক্ষে এই নিয়ে শেষ ২৩ বারের সম্মুখসমরে ১৭তম জয় তুলে নিল স্প্যানিশরা। তারা হেরেছে মাত্র একটিতে, ড্র ৫টিতে। ম্যাচের আগেই বড় ধাক্কা খায় কোয়ার্টারে ফ্রান্সকে পেনাল্টি শুট-আউটে ৫-৪ গোলে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নেওয়া সুইজারল্যান্ড। কার্ড সমস্যায় এই মাঠে নামতে পারেননি দলের অন্যতম সেরা তারকা জাকা। তার বদলে শুরুর একাদশে নামেন আরেক মিডফিল্ডার জাকারিয়া। অন্যদিকে পাউ তোরেস ও জর্দি আলবাকে শুরু থেকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় স্পেন। এরিক গার্সিয়া ও গায়াকে বসতে হয় রিজার্ভ বেঞ্চে।
ম্যাচের অষ্টম মিনিটেই আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় ৫-৩ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে চলতি ইউরো কাপের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট কাটা স্পেন। কোকের কর্নার থেকে আলবার শট সুইজারল্যান্ডের জালে জড়ানোর আগে সুইস মিডফিল্ডার জাকারিয়ার শরীর স্পর্শ করে। ফলে গোলটিকে জাকারিয়ার আত্মঘাতী গোল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জাকারিয়ার গোলের সঙ্গে সঙ্গে চলতি ইউরোয় আত্মগাতী গোলের সংখ্যা দুই অঙ্কে (১০টি) পৌঁছে গেল। আগের সবগুলি ইউরো মিলিয়ে মোট ৯টি আত্মঘাতী গোল হয়েছিল। এবার একটি টুর্নামেন্টেই আগের মিলিত নজির ছাপিয়ে গেল। এগিয়ে যাওয়ার পর স্পেনের খেলায় গতির ঝলক দেখা যায়। কিন্তু প্রথমার্ধে আর সাফল্য আসেনি। ১৭ মিনিটের মাথায় কোকের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২৫ মিনিটের মাথায় অ্যাপিলিকুয়েতার শট জালের খোঁজ পায়নি। ৬৪তম মিনিটে জুবেরের শট প্রতিহত করেন স্প্যিনশ গোলরক্ষক উনাই সাইমন। ৩৯তম মিনিটে সুইজারল্যান্ডের আক্রমণ ব্যর্থ হয়। স্পেনের পোস্ট লক্ষ্য করে উইডমারের নেওয়া শট মাঠের বাইরে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে সুইসরা ম্যাচে ফেরার জোর প্রচেষ্টা চালায়। ৪৮ মিনিটের মাথায় আকাঞ্জি বল স্পেনের জালে রাখতে ব্যর্থ হন। এরপর ৫৬তম মিনিটে জাকারিয়ার শট অল্পের জন্য জাল খুঁজে পায়নি। ৬৪ মিনিটের মাথায় জুবেরের শট প্রতিহত করেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সাইমন। বেশ কয়েকটি ভালো আক্রমণের পর ৬৮তম মিনিটে শাকিরির গোলে সমতায় ফেরে সুইজারল্যান্ড। লাপোর্তে ও পাউ তোরেসের ভুল বোঝাবুঝির সুযোগে স্পেনের বক্সের ঠিক সামনে বল পেয়ে যান ফ্রেউলার। তিনি বল বাড়িয়ে দেন শাকিরির কাছে। ডান পায়ের শটে গোল করতে ভুল করেননি শাকিরি। সুইজারল্যান্ডের হয়ে ইউরোয় সবথেকে বেশি গোল করার রেকর্ড গড়লেন তিনি। এই নিয়ে ইউরোয় মোট ৪টি গোল হলো তার। সমতায় ফেরা স্বস্তির কিছুক্ষণ পরই বড় ধাক্কা খায় সুইজারল্যান্ড। মোরেনোকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেল রেমো ফ্রেউলার। এক মিনিট পর মোরেনোর শট জাল মিস করে। এরপর নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে এবং যোগ করা সময়েও সমতা বিরাজ করায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ে স্পেনের সামনে যেন রোমের প্রাচীর দাঁড়ান সুইস গোলরক্ষক সোমার। স্প্যানিশদের মুহুর্মুহু আক্রমণের মুখে কম করে হলেও ৯টা দুর্দান্ত সেভ করেছেন তিনি। তার জন্যই গোলবন্যায় ভেসে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচে সুইজারল্যান্ড। প্রথম অর্ধের শুরুতেই মোরেনোর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে গোলের সহজ সুযোগ হাতছাড়া হয় স্পেনের। ৯৬তম মিনিটে আলবার শট প্রতিহত করেন সোমার। এক মিনিট পরেই বাঁচান লরেন্তের শট। ১০১তম মিনিটে ফের মোরেনো এবং এরপর টানা দুই বার মিকেলের শট আটকান সোমার। ওই অর্ধে কেউ গোল পায়নি।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর পর ওলমোর শট প্রতিহত করেন সোমার। আক্রমণে শক্তি বাড়াতে ১১৩তম মিনিটে পাউ তোরেসকে তুলে নিয়ে আলকান্তারাকে মাঠে নামায় স্পেন। ডিফেন্ডার সরিয়ে বাড়তি মিডফিল্ডার নামিয়েও অবশ্য লক্ষ্য পূরণ হয়নি এনরিকের। বরং এবারও স্পেনের একতরফা আক্রমণ প্রতিহত করেন সোমার। এরপর পেদ্রিকে তুলে নিয়ে রদ্রিকে নামায় স্পেন। কিন্তু খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
পেনাল্টি শুটআউটের শুরুতেই ধাক্কা খায় স্পেন। সার্জিও বুসকেতসের শট পোস্টে প্রতিহত হয়। কিন্তু লক্ষ্যভেদ করেন সুইজারল্যান্ডের গাভরানোভিচ। দানি ওমলার গোলে সমতায় ফেরে স্পেন। এরপর ফ্যাবিয়ানের পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে দেন উনাই। জবাবে রদ্রির শট ঠেকান সোমার। এরপর আকাঞ্জির শট ঠেকিয়ে দেন স্পেন গোলরক্ষক। তবে মোরেনো লক্ষ্যভেদ করে স্পেনকে এগিয়ে দেন। এরপর সুইজারল্যান্ডের ভার্গাসের পেনাল্টি মিসের পর মিকেলের গোলে ভাগ্য খুলে যায় স্পেনের। শেষ শট আর নিতে হয়নি।
অন্যদিকে মিউনিখের অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায় শুক্রবার রাতে আসরের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ২-১ গোলের ব্যবধানে জিতেছে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রবার্তো মানচিনির দল। এই নিয়ে টানা ৩২ ম্যাচে অপরাজিত থাকার মাইলফলকে পা রাখলো ইতালিয়ানরা। সমান ম্যাচে অপরাজিত ছিল আর্জেন্টিনাও। তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড অবশ্য ব্রাজিল আর স্পেনের দখলে। দুই দলই সমান ৩৫টি ম্যাচে অপরাজিত ছিল। বেলজিয়ামের জন্য ম্যাচের আগে সুসংবাদ হয়ে আসে কেভিন ডি ব্রুইনের ফেরা। চোট থেকে সেরে ওঠে সোজা একাদশে ঢুকেন এই ম্যানচেস্টার সিটি তারকা। অন্যদিকে ইতালির হয়ে ১০০তম ম্যাচে শুরু থেকেই মাঠে নামেন বোনুচ্চি। চলতি ইউরোয় সবচেয়ে ধারাবাহিক ইতালি তার গোলেই শুরুর দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভিএআরের সাহায্য নিয়ে গোল বাতিল করেন রেফারি। চিয়েল্লিনি অফসাইডে ছিলেন।
২২তম মিনিটে ডি ব্রুইনের শট প্রতিহত করেন ইতালির গোলরক্ষক দোনারুমা। এরপর ২৬তম মিনিটে রোমেলু লুকাকুর শট ফেরান তিনি। এক মিনিট পরেই ইনসাইনের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের মাঝেই ৩১তম মিনিটে ভেরাত্তির পাস থেকে গোল করে ইতালিকে এগিয়ে দেন মিডফিল্ডার নিকোলো বারেল্লা। এরপর ৪৪তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইনসাইন। টানা ৩১ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে খেলতে নামা ইতালি প্রথমার্ধের প্রায় শেষ মুহূর্তে গিয়ে গোল হজম করে বসে। যোগ করা সময়ে নিজেদের বক্সে ডোকুকে ফাউল করেন লরেঞ্জো। রেফারি ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি উপহার দেন বেলজিয়ামকে। স্পট কিক থেকে গোল করে ব্যবধান কমান লুকাকু।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ইতালির কয়েকটি আক্রমণ ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে ৪৭তম মিনিটে সিয়েসার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৬৬তম মিনিটে স্পিনাজ্জোলার শট মাঠের বাইরে চলে যায়। একটু পর ইনসাইনের শট প্রতিহত করেন বেলজিয়াম গোলরক্ষক কুর্তোয়া। শেষদিকে ইতালির পোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন ডোকু। তবে বল টার্গেটে রাখতে পারেননি তিনি। শেষ মুহূর্তে রক্ষণ জমাট করে ইতালি, যা আর ভাঙতে পারেনি বেলজিয়াম।
Facebook Comments