শতবর্ষ ছোঁয়ার মুখে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মান পেলেন তিনি। সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার পেলেন বাংলার প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজ সংস্কারক সুধাংশু বিশ্বাস। স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে উদ্বুদ্ধ এই স্বাধীনতা সংগ্রামী সমাজের উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ করে চলেছেন। ৯৮বছরের এই প্রবীণ সারাজীবন দরিদ্র, অনাথ এবং বয়স্কদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুঃস্থদের বিনা পয়সায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অসহায় বৃদ্ধদের জন্য তৈরি করেছেন একটি বৃদ্ধাশ্রম, অনাথ শিশুদের লালনপালনের আশ্রম, দাতব্য চিকিৎসালয়।
দক্ষিণ ২৪পরগণার বিষ্ণুপুরের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে সুধাংশু বিশ্বাসের জন্ম। পড়াশোনা শুরু সেখানেই। তারপর পড়াশোনার সূত্রেই কলকাতায় আসেন তিনি। সেই সময় ব্রিটিশ বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে রয়েছে সমগ্র দেশ। ছাত্রাবস্থাতেই স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত পড়ায় তিনি পুলিশের জালে ধরা পড়েন। ২৯দিন কারাবাস করার পর মুক্তি পান।
স্বাধীনতার পর ১৯৫০-৫১ তে স্বামী বিবেকানন্দের অনুগামী রামানন্দের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সুধাংশুবাবুর নতুন জীবন শুরু হয়।
তিনি হিমালয়ে পাড়ি দেন এবং প্রায় পনেরো বছর সেখানে কাটান। সেইসূত্রে বিভিন্ন সাধুসঙ্গ লাভ করার সুযোগ হয় তাঁর। সেখানে থেকেই বুঝতে পারেন গরীব, নিপীড়িত, পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করেই সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন করা যেতে পারে। তারপর তাঁর অনুগামীরা তাঁকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
১৯৭৩সালে বারুইপুরে তিনি একটা আশ্রম তৈরি করলেন। নাম দিলেন ‘রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম’। যেখানে অনাথ শিশুদের লালন পালন ছাড়াও উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। নির্মাণ করেছেন আরও বেশকিছু দাতব্য শিক্ষাকেন্দ্র, দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম। এখন তিনি একটি মন্দির নির্মাণে সচেষ্ট হয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, প্রস্তাবিত মন্দিরের সব দরজা সকল ধর্মের মানুষের জন্য খোলা থাকবে এবং ‘মানুষের ধর্ম’ মেনে সব ধর্মের উৎসব পালন করবে।
ছবি সৌজন্যেঃ Rediff.com
Facebook Comments