গোলরক্ষকের আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়া, তবুও দারুণ আধিপত্য দেখিয়ে বড় জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিল স্পেন। কিন্তু শেষ দিকের দুই গোলে ফের ম্যাচে ফেরে ক্রোয়েশিয়া। পরে যোগ করা সময়ে দ্রুত দুই গোল স্পেনের। এমন ঘটনাবহুল রোমাঞ্চকর ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করল লুইস এনরিকের শিষ্যরা। সোমবার কোপেনহেগেনর পারকেন স্টেডিয়ামে শেষ ষোলোর ম্যাচে শুরুতে পিছিয়ে পড়া লা রোহাদের হয়ে একটি করে গোল করেন পাবলো সারাবিয়া, সেসার আসপিলিকুয়েতা, ফেরান তোরেস, আলভারো মোরাতা ও মিকেল ওইয়ারসাবাল। আর ক্রোয়েশিয়ার হয়ে একটি করে গোল করেন মিসলাভ ওরসিচ ও মারিও পাসালিচ। ইউরোর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৮) গোলের ম্যাচ এটি। সর্বোচ্চ গোল ৯টি, ১৯৬০ আসরের সেমি-ফাইনালে ফ্রান্সকে ৫-৪ ব্যবধানে হারিয়েছিল তৎকালীন যুগোস্লাভিয়া। আক্রমণাত্মক শুরু করা স্পেন ম্যাচের প্রথমেই বেশ কয়েকটি সুযোগ পায়। তবে তা থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেনি। কিন্তু শ্রোতের বিপরীতে ২০তম মিনিটে উল্টো গোল হজম করে বসে। পেদ্রির ব্যাকপাস থেকে গোলরক্ষক উনাই সিমনের হাস্যকর ভুলে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। বল ঠিকমতো রিসিভ করতে না পারায় জালে জড়ায়। তবে গোল হজম করে আরও তেঁতে ওঠে স্পেন। খেলার ৩৮তম মিনিটে সারাবিয়ার গোলে সমতায় ফেরে স্পেন। পরে ৫৭তম মিনিটে সেজার আসপিলিকুয়েতা ও ৭৭তম মিনিটে ফেরান তোরেসের গোলে ৩–১ গোলে এগিয়ে যায় ইউরোর তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের শেষদিকে রোমাঞ্চ শুরু হয়। ৮৫তম মিনিটে বদলি খেলোয়াড় মিসলাভ ওরসিচের গোলে ব্যবধান কমায় ক্রোয়েশিয়া। আর যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সমতা ফেরে ক্রোয়াটরা। ওরসিচের ক্রস থেকে মারিও পাসালিচ হেডে গোল করে ম্যাচকে নিয়ে যান অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু এবার আর ছাড় দেয়নি স্প্যানিশরা। প্রথমার্ধেই তিন মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল করে জয় নিশ্চিত করে ফেলে দলটি। আলভারো মোরাতা (১০০) ও মিকেল ওইয়ারসাবালের (১০৩) এনরিক শিষ্যদের শেষ আটে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে রোমাঞ্চে ভরা ম্যাচে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ আটে উঠেছে সুইজারল্যান্ড। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে খেলা ৩-৩ গোলে সমতা থাকার পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে কোনো গোল হয়নি। পরে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে জয় পায় সুইসরা। ফ্রান্সের হয়ে টাইব্রেকারে গোল করতে পারেননি দলটির সেরা স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পে। সোমবার রাতে রুমানিয়ার বুখোরেস্টে শেষ ষোলোর ম্যাচে মুখোমুখি হয় দুদল। তবে ম্যাচের প্রথমার্ধে নিজেদের মেলে ধরতে না পারা ফ্রান্স বিরতির পর খোলস থেকে বের হয়। তবে শেষ ১০ মিনিটে ম্যাচে ফিরে সুইসরা নিজেদের টিকিয়ে রাখে। ১৫তম মিনিটে এগিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড। স্টেভেন জুবেরের ক্রস থেকে লংলেকে ছাপিয়ে হেডে গোল করেন হারিস সেভেরোভিচ। তবে ২৬তম মিনিটে ভালো সুযোগ থাকলেও সমতায় ফেরা হয়নি ফ্রান্সের। ফ্রি-কিক থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেনি দলটি।
৩০তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পায় সুইসরা। তবে এমবোলোর হেড জালের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যায়। পরে ১০ মিনিট পরে আরও একটি ভালো সুযোগ আসে দলটির সামনে। তবে কর্ণার থেকে উড়ে আসা বলে আকানজি হেড দিলে তা গোলের জন্য যথেষ্ট হয়নি। দুই মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে গোলের জন্য এগিয়ে গেলেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
বিরতির পর সুইসদের বড় একটি সুযোগ আসে। ৪৯তম মিনিটে সেফেরোভিচের থ্রো থেকে এমবোলো জায়গা মতো বল পেলেও ধরে রাখতে পারেননি। রাফায়েল ভারানে বলে টাচ দিয়ে সরিয়ে দেন। তবে ৫১তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেনি দলটি। বেনজামিন পাভার জুবেরকে ফাউল করলে রেফারি ভিএআর যাচাই করে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। আর রিকারদো রদ্রিগেসের নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন হুগো লরিস।
অবশেষে বেনজেমার গোলে সমতায় ফেরে ফ্রান্স। ৫৬তম মিনিটে এমবাপ্পের পাস থেকে চিপ করে গোলটি আদায় করেন এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। আর দুই মিনিট পর এই স্ট্রাইকার ফরাসিদেও এগিয়েও দেন। আঁতোয়া গ্রিজম্যানের ক্রস থেকে হেডের মাধ্যমে গোল করতে ভুল করেননি তিনি। আক্রমণের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ফ্রান্স ৭৪তম মিনিটে ব্যবধান ৩-১ করে। বেনজেমার করা শট আটকে দিলেও ফিরতি শটে পল পগবা ডান কোনা দিয়ে গোলটি করেন।
পিছিয়ে পড়ে দিশেহারা সুইজারল্যান্ড ৮০তম মিনিটে দারুণ এক গোলে ব্যবধান কমায়। এমবাবুর ক্রস থেকে হেডের মাধ্যমে নিজের জোড়া গোল পূরণ করেন সেফেরোভিচ। আর ম্যাচের শেষ মিনিটে চমক দেখায় দলটি। বাঁ দিক থেকে মারিও গাভরানোভিচ শট করে গোলটি করেন। সেইসঙ্গে নিজেদের ম্যাচে বাঁচিয়ে রাখেন। যদিও যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে জয় নিশ্চিত করার সুযোগ পেয়েছিল ফ্রান্স। কিন্তু কিংসলে কোম্যানের ভল্যি পোস্টে বাধা পড়ে। মূল ম্যাচের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে দুদল আরও বেশ কয়েকটি চেষ্টা করলেও গোল হয়নি। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে সুইজারল্যান্ডের হয়ে গাভরানোভিচ, শ্চার, আকানজি, ভারগাস ও মেহমেদি গোল করেন। তবে ফ্রান্সের হয়ে প্রথম চারটি গোল একে একে পগবা, অভিভার জিরুদ, থুরাম ও কিমপেম্বে করলেও, পঞ্চম শটটি থেকে এমবাপ্পে গোল করতে পারেননি। তার বাঁ দিকে করা শট সুইস গোলরক্ষক সোম্মর হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দেন।
Facebook Comments