তন্বী রায়, কলকাতা : থাইল্যান্ড দেশটি ছোট হলেও সেটি যেমন প্রাকৃতিক বৈচিত্রে পরিপূর্ণ তেমনি তার খাদ্যবৈচিত্র্য এবং তার হরেকরকমের রন্ধনপ্রণালীর জন্যও বিখ্যাত। থাইফুড বা থাইল্যান্ড দেশের খাদ্যগুলির বিশেষত্ব নানারকম সুগন্ধি মশলাপাতি এবং প্রতিটি রান্নায় তার সহজ পরিমিত এবং সুষম ব্যবহারের মধ্যে পাওয়া যায়। এই মশলাপাতির ব্যবহারে এবং রন্ধনপদ্ধতিতে অনেকসময়ই ভারত এবং থাইল্যান্ডের মধ্যে সাদৃশ্য মেলে। আমাদের ভাত ও মাছের ঝোলের মত ওদেশেও রয়েছে স্টীম্ড রাইস এবং থাই গ্রীন বা রেড কারি। তাই ভারতীয়দের কাছে থাই ফুড খুব সহজেই গ্রহণযোগ্য।
থাইফুডকে আরও বেশী জনপ্রিয় করে তোলার জন্য ট্যুরিজ্ম্ অথোরিটি অফ্ থাইল্যান্ডের উদ্যোগে কলকাতার বেশ কিছু নামী দামী পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত হল থাই ফুড ফেস্টিভাল। থাইল্যান্ডের রন্ধন ঐতিহ্যকে তুলে ধরাই এর মূল উদ্দেশ্য।
থাইফুড ফেস্টিভাল উদ্বোধন হয় দ্য ললিত গ্রেট্ ইস্টার্ণ হোটেলে রয়্যাল থাই কনসুলেট জেনারেল এর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কনসুল জেনারেল মিস ভিনাস আসওয়াপুম, থাই ট্রেড সেন্টার, নিউ দিল্লীর ডিরেক্টর মিস্টার থারাডল থংগ্রুয়াং, থাই এয়ারওয়েজ্ ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড এর কলকাতার ডিরেক্টর মিস্টার ক্রীক্ থিরারাক এবং দ্য ললিত গ্রেট ইস্টার্ণ এর জেনারেল ম্যানেজার, মিস্টার জয়দেব দত্তের উপস্থিতিতে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাই নৃত্যশৈলী পরিবেশন করেন থাইল্যান্ড থেকে আগত নৃত্যশিল্পীরা।
মাস্টার শেফ্ সুরিয়া ফুসিরিম্যঁক্যঁচাই সকল অতিথির সামনে প্রস্তুত করলেন ’খানম্ ক্রক্ চাও ওয়েং’ — একটি ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় ডেজার্ট। ঘন নারকেলের ক্রীম দিয়ে তৈরী এই সুস্বাদু মিষ্টি ভারতের সাথে থাইল্যান্ডের প্রাচীন সাংস্কৃতিক সংযোগের একটি আদর্শ উদাহরণ। এই মিষ্টি প্রস্তুত করার সময় যে প্যান ব্যবহার করা হয় তা দক্ষিণ ভারতীয় আপ্পাম তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।
আরেকটি পাঁচতারা হোটেল জে,ডব্লিউ,ম্যারিওট্ এর ভিন্টেজ এশিয়াতেও অনুষ্ঠিত হয় ‘ দ্য টেস্ট অফ্ থাইল্যান্ড ’। থাই শেফ্ সামার্ত্ পরিবেশন করেন দক্ষিণ ,মধ্য এবং পূর্ব থাইল্যান্ডের কিছু প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এবং বিখ্যাত রেসিপি। বোনলেস চিকেন কিমা, শ্যালট বা লাল পেঁয়াজ , ধনে পাতা, থাই চিলি স্যস্, থাই জিঞ্জার, ফিশ স্যস্, সোয়া স্যস্ ইত্যাদি দিয়ে তৈরী ঝাল-ঝাল, মুখরোচক ‘লাপ্ গাই’। ‘থর মান কুং’ বা চিংড়ির কেক আরেকটি অতি উপাদেয় পদ। উপকরণ হিসাবে লাগবে চিংড়ি, ডিম, থাই রেড কারি পেষ্ট, নারকেল দুধ, কাফির লাইম, বিনস্, ফিশ স্যস্ এবং কোটিং এর জন্য পাংকো ব্রেড ক্রাম্পস্। এই মচমুচে ও উপাদেয় নোনতা কেকটি টক-ঝাল- মিষ্টি স্যস্ এ ডুবিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা।
এরপর আসা যাক প্লা থোড্ আরেকটি পদে। সামুদ্রিক মাছকে নুন, রসুন ও অন্যান্য মশলা দিয়ে ম্যারিনেড করে ডিপ ফ্রাই করা সাথে টক-ঝাল-মিষ্টি স্যস্।‘গাইংকা-মিন’ বা রোস্টেড চিকেন ও খুবই বিখ্যাত। এক্ষেত্রে চিকেন ম্যারিনেড করার উপকরণগুলি আলাদা। হলুদ, রসুন, মরিচ, ব্ল্যাক সয়া স্যস্, ধনে গাছের মূল দিয়ে ম্যারিনেড করা চিকেনকে মিডিয়াম হিটে রোস্ট করা হয়। রোস্ট করার সময় ব্যবহার করা হয় সুগন্ধী থাই চিলি।
থাই গভর্নমেন্ট -এর এই প্রচেষ্টা যেমন কলকাতায় থাই ফুড এবং থাই সংস্কৃতিকে পরিচিতি দিতে সাহায্য করছে তার সাথে সাথে থাইল্যান্ড ও ভারতের মধ্যে একটি বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক এবং মেলবন্ধন গড়ে ওঠাকেও ত্বরাণ্বিত করছে।
ছবি : শুভম পাল ও সংগ্রাম পাল
Facebook Comments