পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের নাম শুনলেই যেন রাজনীতির গন্ধ নাকে ভাসে। হিংসার ইতিহাসের কথা মনে পড়ে। রাজনৈতিক হানাহানির আতঙ্ক গ্রাস করে চোখেমুখে। সেই কেশপুরই এবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো, মানবিকতায় গড়লো অনন্য নজির। নিজের বিয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠানে রক্তদান শিবিরের আওয়াজ করলো কেশপুরের রাউতা গ্রামের সুদর্শন কলার কনিষ্ঠ পুত্র প্রণব কলা। গ্রীষ্মকালে রক্তের চাহিদা মেটাতে অভিনব এই উদ্যোগ নিয়েছেন কলা-পরিবার। শুক্রবার প্রণব কলা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন ঘাটালের খড়ারের বাসিন্দা জয়দেব মাজীর কন্যা পাপিয়ার সাথে। আর প্রীতিভোজে রক্তদান উৎসব অনুষ্ঠিত হলো শনিবার দুপুরে।
বিভিন্ন সংগঠন, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে রক্ত দানের কথা সকলেই দেখেছেন। জন্মদিনে, এমনকি কিছুদিন আগেই মৃত বাবার শ্রাদ্ধবাসরেও রক্তদানের কথা শোনা গেছে। কিন্তু বৌভাতে রক্তদানের অভিনব উদ্যোগ খুব একটা নজরে পড়ে না। প্রশংসনীয় এই উদ্যোগে কলা পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্রের সদস্যবৃন্দ ও স্থানীয় রাউতা সূর্যতোরণ ক্লাব। রক্ত সংগ্রহে এগিয়ে এসেছেন মেদিনীপুর সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। রক্তদানে অংশ নিয়েছেন প্রীতিভোজে আগত অতিথি ও গ্রামবাসীরা। প্রথম রক্তদাতা হিসেবে রক্তদান করেন ভলান্টারী ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সম্পাদক জয়ন্ত মুখার্জী, যাঁকে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রক্তদাতা বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। এই মহতী রক্তদান শিবিরের সূচনা করেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃগিরিশচন্দ্র বেরা। এই শিবিরে বিশেষ রক্তদাতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দৃষ্টিহীন ক্রিকেট দলের সদস্য অরবিন্দ পাত্র।
শনিবারের এই শিবিরে মোট ১৭জন রক্তদাতা রক্তদান করেন যাঁদের মধ্যে ২জন মহিলাও ছিলেন। গৃহকর্তা সুদর্শন কলা ও গৃহকর্ত্রী শিবানী কলা উপস্থিত সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানান। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশবাবু এই অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে, সামাজিক এই কর্মকাণ্ডে সবাইকে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। রক্তদাতাদের হাতে মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে স্মারক হিসাবে একটি করে চারাগাছ তুলে দেওয়া হয়। রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতে এবং শিবিরটিকে সাফল্যমন্ডিত করে তুলতে কুইজ কেন্দ্রের সদস্যগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চঞ্চল হাজরা, সুভাষ জানা, স্নেহাশীষ চৌধুরী, সুদীপকুমার খাঁড়া, সঞ্জীব জানা, শবরী বসু, প্রসূনকুমার পড়িয়া, সেলিম মল্লিক, সাগরময় জানা প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। পরিবারের পক্ষে প্রণবের দাদা প্রশান্ত কলা বলেন, এই সামাজিক কাজে পরিবারকে যুক্ত করতে পেরে আনন্দ হচ্ছে। আর নবদম্পতি প্রণব ও পাপিয়া জানান, ‘এইরকম একটি সামাজিক দায়বদ্ধতার কাজের মধ্য দিয়ে নিজেদের নতুন জীবন শুরু করতে পেরে খুব আনন্দ হচ্ছে, এটা আমাদের কাছে সারাজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
ছবি সৌজন্যেঃ সুদীপ কুমার খাঁড়া
Facebook Comments