ইরানকে প্রতিহত করতে মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তি সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (১৭ জুন) মার্কিন ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা সচিব প্যাট্রিক শানাহান গণমাধ্যমে এ ঘোষণা দেন।
যদিও এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ এই দেশটি আগামী ১০ দিনের মধ্যে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যমান পরমাণু চুক্তি থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যার মাধ্যমে নিজেদের ইউরেনিয়াম মজুদ ও সমৃদ্ধকরণ মাত্রা বাড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছিল তেহরান।
ইরানি পরমাণু শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি দেন বার্তা সংস্থা ‘এপি’কে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের চাপানো অর্থনৈতিক অবরোধ ও দেশটির সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে তেহরান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইরান বিশ্বাস করে, এর মাধ্যমে পরমাণু চুক্তি রক্ষায় ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর নতুন করে আরও চাপ তৈরি করা যাবে।’
পরমাণু সংস্থার এই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আগামী ২৭ জুনের মধ্যে আমরা ইউরোপের সঙ্গে করা সেই চুক্তির একাংশ থেকে বেরিয়ে যাব। নতুন করে এই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ২০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, যা পরমাণু অস্ত্র নির্মাণে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়ামের মজুদের কাছাকাছি।’
এ দিকে তেহরানের এ ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা বৃদ্ধির ওজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত এক হাজার খানেক সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে।
মার্কিন ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা সচিব প্যাট্রিক শানাহান বলেন, ‘ইরানের চলমান বৈরী আচরণের প্রেক্ষিতে এই সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো সহিংস পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে।’
যদিও ঘোষণাটির পরপরই মার্কিন নৌবাহিনী সম্প্রতি ওমান উপসাগরে তেলবাহী ট্যাঙ্কারে হামলার সঙ্গে ইরানের সম্পৃক্ততা রয়েছে দাবি করে নতুন কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে। যদিও প্রথম থেকে এ ধরনের অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে একে একটি ভিত্তিহীন দাবি বলে আসছে তেহরান।
এর আগে ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ছয় জাতির পরমাণু চুক্তি থেকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের বের করে নেন। একই সঙ্গে চুক্তিটিকে একটি অকার্যকর বলে উল্লেখ করে তেহরানের তেল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও এর পরপরই এই দুদেশ মধ্যকার সম্পর্কে এক বৈরিতা দেখা দেয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। অপর দিকে ওয়াশিংটনের দেওয়া এ ঘোষণার ঠিক এক বছর পর এই চুক্তি থেকে আংশিক সরে আসার বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানায় তেহরান। মূলত এরপরই ইরানের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে উপসাগরীয় এলাকায় বিমানবাহী রণতরী ‘আব্রাহাম লিঙ্কন’ ও ক্ষেপণাস্ত্রসহ যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। এবার যার প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত এক হাজার সেনা পাঠানোর দিকে হাঁটছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ছবি সংগৃহিত
Facebook Comments