বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের অন্যতম অভিনেতা অমরনাথ মুখোপাধ্যায়ের জীবনাবসান। মুম্বইতে নিজের বাড়িতেই ঘুমের নিঃশব্দে চলে গেলেন উত্তম-সুচিত্রা জুটির এই সহ অভিনেতা। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। শুক্রবার সকালে প্রিয় ‘অমরনাথকাকু’র মৃত্যু সংবাদ প্রথম জানান অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তাঁর ফেসবুক পোস্টে জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘অমরনাথ কাকু ভালো থেকো অন্য পৃথিবীতে। তোমার নম্বরটা থেকে যাক আমার মুঠোফোনে’। জয়জিতের এই পোস্টেই শোকজ্ঞাপন করে অভিনেত্রী সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায় লেখেন, ‘ইস্! বসন্ত বিলাপে দাদার চরিত্রটা ভোলা যাবে না কোনোদিন। কি সুন্দর উচ্চারণ।’ পরিচালক অনিন্দ্য সরকার লেখেন, ‘কাজ করেছি একসাথে অসম্ভব স্নেহ পেয়েছি ভালোবাসা পেয়েছি… প্রণাম জানাই তোমাকে’। পরে আর্টিস্ট ফোরামের তরফে ‘মৌচাক’, ‘বসন্ত বিলাপ’ খ্যাত অভিনেতার মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান হয়।
অমরনাথ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ সিনেপ্রেমীরা। উত্তম কুমার, রঞ্জিত মল্লিক অভিনীত ‘মৌচাক’ ছবিতে তাঁর স্বল্প উপস্থিতিই নজর কেড়েছিল। ‘ডঃ গুপ্ত’র চরিত্রাভিনেতা অমরনাথ মুখোপাধ্যায়। শুধু মৌচাক নয় এর পাশাপাশি বহু বাংলা ছবিতে তাঁর অভিনয় নজর কেড়েছিল দর্শক সাধারণের। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে কিছুটা অভিমানেই তিনি নিজেকে প্রচারের আলো থেকে সরিয়ে অন্তরালেই ছিলেন। আর সেখান থেকেই চির বিদায় নিলেন নিঃশব্দে।
১৯৩৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কলকাতাতে জন্মগ্রহণ করেন অমরনাথ মুখোপাধ্যায়। ৭০-এর দশকে বাংলা ছবিতে পা রাখেন অমরনাথ। বাবা ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা হরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। অমরনাথের প্রথম ছবি ছিল ‘মেঘ কালো’। এই ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুচিত্রা সেন। অভিনয়ের জগতেই বড় হয়ে ওঠা তাঁর, তাই ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়ে যায়। যৌবনে পা দিতে না দিতেই তরুণ কুমার, রবি ঘোষ, জোছন দস্তিদারের সঙ্গে নাটকের দলে কাজ শুরু করেন। ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে রুপোলি পর্দায় যাত্রা শুরু করেন। এরপর ‘হার মানা হার’ ছবিতে সুচিত্রা সেনের দাদার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমরনাথ মুখোপাধ্যায়। ‘মৌচাক’-এর পাশাপাশি ‘বসন্তবিলাপ’ ছবিতে তাঁর অভিনয় চলচিত্র প্রেমীদের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এছাড়াও ‘ছিন্নপত্র’, ‘স্ত্রী’, ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’, ‘আলো’, ‘স্বয়ংসিদ্ধা’, ‘অগ্নীশ্বর’, ‘বিদ্রোহী’–র মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রতিভা উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি ছবিতেই পার্শ্ব চরিত্রে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে নজর কেড়েছেন অমরনাথ মুখোপাধ্যায়। বাংলার পাশাপাশি সত্তর ও আশির দশকে হিন্দি চলচ্চিত্রেও কাজ করেন তিনি। শুরুটা হয়েছিল শক্তি সামন্তর ‘অমানুষ’-এর হিন্দি ভার্সন দিয়ে। পরবর্তীতে ‘ধন দৌলত’, ‘ধুঁওয়া’, ‘ডিস্কো ডান্সার-এর মতো ছবিতেও কাজ করেছেন। অভিনয় করেছেন হিন্দি ও বাংলা সিরিয়ালেও। তাঁর শেষ উল্লেখযোগ্য ছবি হল, তরুণ মজুমদারের ‘আলো’। এরপর ধীরে ধীরেই অন্তরালে চলে যান তিনি। ইন্ডাস্ট্রির লোকজনও আর সেভাবে খোঁজ রাখেনি তাঁর।
২০০৫ সাল থেকে পাকাপাকিভাবে মুম্বইতে ছেলের কাছে থাকতেন এই প্রবীণ অভিনেতা। গতকাল ২৫শে মে (বৃহস্পতিবার) মুম্বইয়ে পরলোক গমন করেন। জানা গেছে, বার্ধক্যজনিত বেশকিছু সমস্যায় ভুগছিলেন অমরনাথ মুখোপাধ্যায়, অবশেষে বাড়িতেই ঘুমের মধ্যে প্রয়াত হলেন এই শিল্পী। রেখে গেলেন স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতিকে।
Facebook Comments