ঋতুকন্যা হেমন্তর হাত ধরে দ্বৈত মাস কার্তিক ও অগ্রহায়ণ একাধারে আবির্ভাব হয় এই প্রকৃতির কোলে। একদিকে ‘মরা’ মাসের অন্তিম কাল অন্যদিকে সোনালি সমৃদ্ধির উদ্ভাস, এই দুই মিলেই শুভ সূচনার সূত্রপাত হয় হেমন্তর। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র যখন কুয়াশার নীরব আলিঙ্গনে বেষ্টিত তখনই উঁকি দেয় দেরাজ বন্দি চাদর, মাফলার, মোজা। হিমেল হাওয়া জানান দিয়ে যায়, শীতের চাদরের এবার রোদ মাখার সময় এসেগেছে। ইতিমধ্যে বাড়ির মা ঠাকুমারা শীতের পোশাক রোদে দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন। যেখানে, হেমন্তর মিঠে রোদ আর হিমেল হাওয়া, চাদরের গায়ে শীতের উল্কি কেটে দেয়।
হেমন্তের আঙ্গিনায় কবি জীবনানন্দও তাঁর শৈল্পিক চিন্তাধারার তুলিতে আলপনা এঁকেছেন, “শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে/ অলস গেঁয়োর মতো এইখানে কার্তিকের ক্ষেতে/ মাঠের ঘাসের গন্ধ বুকে তার – চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ…” জীবনান্দের ‘অবসরের গান’ এ ধরা পড়েছে সোনালি ফসল,নবান্ন উৎসব, নতুন গুঁড়ের গন্ধ ও হালকা শীতের আমেজ । গ্রামের হেমন্তর পাশাপাশি শহুরে জীবনযাত্রায় হেমন্তর যাত্রাপথ কিন্তু কম রঙিন নয়। শহরেও কার্ত্তিক-অগ্রাহায়নের লুকোচুরি খেলায় সামিল হয় হিমেল হাওয়া, নলেন গুঁড়, পিঠে পুলি, গায়ের গরম চাদর, মাফলার, মোজা, প্রাতঃভ্রমণ, আড্ডা, কফির কাপে চুমুক আর সর্বশেষ এক চাদরের নরম গরম প্রেম। শীতের চাদর যে শুধু সুতোয় বোনা হবে তা নয় । প্রেমের বুননেও এই চাদরকে উপভোগ করা যায়। যার উষ্ণ পরশ হেমন্তর পারদকে চড়িয়ে দেয় বহুগুনে। তাই আর বেশি দেরি নেই। প্রেম আসছে আরও গভীর ভাবে।
হেমন্ত আর বসন্তর প্রকৃতি অনেকটা একই রকম। একজন শীত বয়ে নিয়ে আসে আর একজন শীত কাঁধে করে নিয়ে যায়। আর এই দুইয়ের মধ্যিখানে খেলে বেরায় শীতের চাদর।
Photo : Basab Ray
Facebook Comments