রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা পরিস্থিতির রিপোর্ট দুদিন আগে কলকাতা হাইকোর্টের জমা দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দল। মুখ বন্ধ খামের সেই রিপোর্ট বৃহস্পতিবার সামনে এলো। রিপোর্টে কড়া ভাষায় রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের সমালোচনা করেছে কমিশন। রাজ্যের আইনের শাসন নয় শাসকের আইন চলছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ করা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কমিশনের প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে বিচার পর্ব অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত করার সুপারিশও করেছেন তারা।
রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার রিপোর্টে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রাজ্যে আইনের শাসনের পরিবর্তে শাসকের শাসন চলছে বলে তুলধনা করেছে রাজ্য সরকারকে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মাটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম সে মাটিতে হাজার হাজার মানুষের ওপর নৃশংস অত্যাচার, খুন, ধর্ষণের ঘটনা অকল্পনীয়। রিপোর্টে সেইসব ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি তুলে মামলা বাইরের রাজ্যে স্থানান্তরের পক্ষে সাওয়াল করা হয়েছে।
কমিশনের রিপোর্টে লেখা হয়েছে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকরা রাজ্যে যেভাবে হিংসার পরিবেশ তৈরি করেছে তাতে সাধারণ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকায় এর প্রভাব পড়েছে। শাসক দলের দুষ্কৃতীদের আতঙ্কে বহু মানুষ এখনো ঘরছাড়া। যৌন অপরাধের শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। কিন্তু ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারছেন না। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে লেখা হয়েছে, হিংসার ঘটনায় পুলিশ সরাসরিভাবে যুক্ত না থাকলেও গাফিলতির অনেক ঘটনা ঘটেছে।
রিপোর্টে কমিশন লিখেছে, হিংসার ঘটনা নিয়ে রাজ্যের কোনও প্রশাসনিক কর্তা বা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের মুখ খুলতে দেখা যায়নি। দিনের পর দিন সাধারণ মানুষের জীবন ধারণের অধিকার, বাক স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। কিন্তু তাতে রাজ্য প্রশাসনকে উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়নি। রাজ্যজুড়ে যে হিংসার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার পেছনে রাজনীতি আমলাতন্ত্র, অপরাধজগতের আঁতাঁত রয়েছে।
কমিশন মনে করেছে, আইনের শাসন, রাজনীতির বহুত্ববাদ, স্বচ্ছ নির্বাচনের মতো গণতন্ত্রের একাধিক স্তম্ভকে নাড়িয়ে দিয়েছে এইসব ঘটনা। ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাজ্যের খুন-ধর্ষণের মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার তদন্তভার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষে সাওয়াল করেছে কমিশন।
একইসঙ্গে এসব মামলার শুনানি অন্য রাজ্যে হওয়া উচিত বলে মনে করেছে কমিশন। রিপোর্টে কমিশনের সুপারিশ, মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ফাস্টট্রাক আদালত গঠন করা প্রয়োজন। স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে সিট গঠন সহ মামলার সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিশেষ সহকারী আইনজীবীদের নিযুক্ত করার পক্ষে সাওয়াল করেছে কমিশন। এছাড়া হিংসার ঘটনার যারা শিকার হয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, মহিলাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আর্জি জানানো হয়েছে।
এছাড়াও দায়ী সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার দাবি করা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ সহ আদালতের নির্দেশ মেনে চলা হচ্ছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করার আর্জি জানানো হয়েছে।
তবে কমিশনের রিপোর্ট প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য না শুনেই একতরফা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কমিশন। আমাদের বিশ্বাস রাজ্যকে হলফনামা পেশ করার সুযোগ দেবে আদালত। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায়িত্বে তখন নির্বাচন কমিশন ছিল আমি আর কিছুই বলতে চাই না।”
Facebook Comments