ভারতের বিশাল রানের পাহাড়ে টপকাতে যেরকম সাহসী ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন ছিল সেরকম কিছু দেখাতে পারলো না অস্ট্রেলিয়া। তবে ৩৫৩ রানের বিশাল টার্গেটে খেলতে নেমে ওয়ার্নার- স্মিথ-উসমান খাজাদের ব্যাটিং এক সময় অস্ট্রেলিয়া শিবিরে আশা জাগিয়েছিল।
আর শেষ দিকে ক্যারির ঝড়ো ইনিংস কেবল আক্ষেপই বাড়িয়েছে। স্মিথ (৬৯) ওয়ার্নার (৫৬) ও খাজা (৪২) ও ক্যারির (৫৫*) অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তার পরও শেষ পর্যন্ত ৩১৬ রানে অলআউট হয়েছে টিম স্টিভ ওয়াহর উত্তরসূরীরা। ভারতের কাছে তারা হেরে গেছে ৩৬ রানে।
ভারত যেখানে প্রথম ১০ ওভারে করে বিনা উইকেটে ৪১ রান সেখানে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ১০ ওভারে করে বিনা উইকেটে ৪৮ রান।
ভারতের প্রথম ৫০ রান আসে ১১.৩ ওভারে, আর অস্ট্রেলিয়ার সমান সংখ্যক রান হয় ১০.৪ ওভারে। ভারতের প্রথম ১০০ রান আসে ১৮.৬ ওভারে, অস্ট্রেলিয়ার সেটি হয় ২০ ওভারে।
এরপর থেকেই দুদলের ব্যবধান বাড়তে থাকে। ভারত ১৫০ রান করে ২৬. ৪ ওভারে, আর অস্ট্রেলিয়ার দলীয় দেড়শ’ রান হয় ২৮.২ ওভারে।
ভারত ২০০ রান করে ৩৩. ৫ ওভারে, আর অস্ট্রেলিয়ার দলীয় ২০০ রান হয় ৩৬ ওভারে। তবে কাকতালীয়ভাবে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের ২৫০ রান হয় ঠিক একই সময়ে। দু’দলই ৪১.১ ওভারে তাদের স্কোরবোর্ডে আড়াইশ’ রান জমা করে।
তবে হার্দিক পান্ডে যেমন ২৭ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ঠিক একইভাবে ম্যাক্সওয়েলও যদি তেমন কিছু দেখাতে পারতেন তবে অস্ট্রেলিয়ার জন্য জয় অসম্ভব ছিল না।
তবে ম্যাক্সওয়েলও সেভাবে শুরু করেছিলেন। মাত্র ১৪ বলে ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে জাদেজার হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন এ হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান। তখনই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় টিম অস্ট্রেলিয়া। শেষ ক্যারির ৩৫ বলে ৫৫ রানের ঝড়ো ইনিংস কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছে।
এ ম্যাচ জিতলে রেকর্ড হতো অস্ট্রেলিয়ার। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়ে ফেলতে পারত। অবশ্য এই রেকর্ড আয়ারল্যান্ডের দখলে আছে। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২৮ তাড়া করে জিতেছিল তারা। অস্ট্রেলিয়া পারেনি এই রেকর্ড ভাঙতে।
ওভালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শেখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলির অনবদ্য ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে পাঁচ উইকেটে ৩৫২ রান সংগ্রহ করে ভারত।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১১৭ রান করেন শেখর ধাওয়ান। তার ইনিংসটি ছিল ১৬টি চারে সাজানো। এছাড়া কোহলি ৭৭ বলে ৮২ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন। তার ইনিংসটি ছিল ৪টি চার ও দুটি ছক্কায় সাজানো। রোহিত শর্মা করেন ৫৭ রান। ৭০ বলে করা তার ইনিংসটিতে ছিল ৩টি চার ও একটি নান্দনিক ছক্কা।
আর শেষ দিকে ঝড় তোলেন হার্দিক পান্ডে। মাত্র ২৭ বলে ৪৮ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন এ হার্ডহিটার। তার ইনিংসটি ছিল ৪টি চার ও তিনটি ছক্কায় সাজানো।
ভারতে উদ্বোধনী জুটিতে নামা শেখর ধাওয়ানকে সাজঘরে ফেরত পাঠান অস্ট্রেলিয়ান বোলার স্টার্ক। ইনিংসের ৩৭তম ওভারে তিনি আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। তিনি ১০৯ বলে ১১৭ রান করেন।
এর আগে উদ্বোধনী জুটিতে ১২৭ রান সংগ্রহ করে বড় সংগ্রহের শেখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা। ইনিংসের ২২ ওভারে রোহিত শর্মাকে ৫৭ রানে সাজঘরে ফেরত পাঠান অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলার নাথান কাল্টার নাইল।
দু’দলই এবারের আসরে এখন পর্যন্ত অপরাজিত ছিল। তবে আজকের হারের মধ্য দিয়ে চলা বিশ্বকাপে প্রথম হারল। ভারত অবশ্য খেলেছে একটি ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ছয় উইকেটে হারিয়ে ফেভারিটের মতোই বিশ্বকাপ শুরু করেছে ১৯৮৩ ও ২০১১ আসরের চ্যাম্পিয়নরা।
অন্যদিকে রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে হারিয়েছে আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। আসল পরীক্ষাটা আজ দিতে হবে অ্যারন ফিঞ্চের দলকে। দলকে বিজয়ী করতে বিশাল রানের পাহাড় ডিঙাতে হবে।
ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে ভারত এগিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপ মঞ্চে চিরকালের ফেভারিট অস্ট্রেলিয়া। একদিবসী ক্রিকেটে দু’দলের আগের ১৩৬ ম্যাচে ভারতের ৪৯ জয়ের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৭৭টি। বাকি ১০টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।
Facebook Comments