বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরগুলোর তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস, সেইসঙ্গে হংকং এবং সিঙ্গাপুরের নাম।
বিশ্বের বিভিন্ন শহরের জীবনযাত্রার মূল্যমান তুলনা করে দ্য ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রতিবছর এই জরিপ পরিচালনা করে থাকে। এবার ১৩৩টি দেশে এই জরিপ করা হয়।
গত ৩০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম প্যারিস, হংকং এবং সিঙ্গাপুরের নাম শীর্ষে স্থান পেয়েছে।
প্যারিস, গত বছরের শীর্ষ ১০ ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। এছাড়া ওই তালিকায় সেবার ইউরোপের আরও তিনটি শহরও ছিল।
জরিপে ১৩৩টি দেশের খুব সাধারণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম তুলনা করা হয়। যেমন: কোন শহরের পাউরুটির দাম কত? আর এই তুলনামূলক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরকে।
মূলত নিউ ইয়র্কের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মূল্যের সাথে তুলনা করা হয় ওই ১৩৩টি শহরের জীবনযাত্রার দাম। তুলনা করা হয় সেই খরচ নিউ ইয়র্কের চাইতে কম নাকি বেশি।
চুল কাটার সাথে তুলনা
প্রতিবেদনটির লেখক রক্সানা স্ল্যাভচেভা বলেছেন, প্যারিস ২০০৩ সাল থেকেই সবচেয়ে ব্যয়বহুল শীর্ষ ১০ শহরের তালিকায় ছিল।
এ থেকে ধারণা করা যায়, বসবাস করার ক্ষেত্রে প্যারিস আসলেও ‘অত্যন্ত ব্যয়বহুল’ শহর।
ইউরোপের অন্য শহরগুলোর তুলনায় এখানে শুধুমাত্র মদ, পরিবহন ও তামাকের দামেই ভারসাম্য লক্ষ্য করা যায়। আর বাকি সবকিছুর দামই আকাশছোঁয়া।
উদাহরণস্বরূপ, একজন নারীর চুল কাটার পেছনে কতই বা খরচ হতে পারে। তবে প্যারিসে সামান্য চুল কাটার জন্য গুনতে হবে ১১৯ ডলারেরও বেশি। যেখানে কিনা জুরিখে খরচ হয় প্রায় ৭৪ ডলার এবং জাপানের শহর ওসাকাতে লাগে ৫৪ ডলার।
‘ইউরোপীয় শহরগুলোতে সাধারণত সবচেয়ে বেশি খরচ হয় গৃহস্থালির পণ্য, ব্যক্তিগত যত্নের পণ্য, বিনোদন এবং বিনোদন সংক্রান্ত অন্যান্য নানা পণ্য ও সেবা কিনতে গিয়ে। আর এই প্রতিটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় প্যারিসবাসীদের।’- এমনটাই বলেছেন মিস স্লাভচেভা।
একেকটি দেশের চুল কাটার খরচ একেক রকম।
বিশ্বের শীর্ষ ব্যয়বহুল শহর:
১. সিঙ্গাপুর (সিঙ্গাপুর), ১. প্যারিস (ফ্রান্স), ১. হংকং (চীন),
৪. জুরিখ (সুইজারল্যান্ড),
৫. জেনেভা (সুইজারল্যান্ড),৫. ওসাকা (জাপান),
৭. সিউল (দক্ষিণ কোরিয়া), ৭. কোপেনহেগেন (ডেনমার্ক), ৭. নিউ ইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র), ১০. তেল আবিব (ইসরায়েল), ১০. লস অ্যাঞ্জেলস (যুক্তরাষ্ট্র)।
কোন শহরের জীবনযাত্রা সবচেয়ে সস্তা?
মুদ্রাস্ফীতি এবং অস্থির মুদ্রা বাজারের ফলে এ বছর সবচেয়ে সস্তা শহরের তালিকায় বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা গেছে।
এবারে জীবনযাত্রার মান বিবেচনায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, তুরস্ক ও ভেনিজুয়েলার মতো দেশগুলো।
ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাস, এই বছরের জরিপে সবচেয়ে সস্তা শহর হিসেবে শীর্ষস্থান পেয়েছে।
এর কারণ গত বছর দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১,০০০,০০০%। যার কারণে দেশটির সরকার বাধ্য হয়েছিল ভেনেজুয়েলায় নতুন মুদ্রা চালু করতে।
ব্লুমবার্গের মতে, গত ডিসেম্বরে রাজধানী কারাকাসে এক কাপ কফির দাম মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে বেড়ে ৪০০ বোলিভারে দাঁড়ায়। ডলারের হিসাবে যা কিনা মাত্র ৬২ সেন্ট।
এছাড়া যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ার দামেস্ক শহর বিশ্বের দ্বিতীয় সস্তা শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে।
দ্য ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মতে, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ভাঙনের কারণে বিশ্বে সস্তা শহরের সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলছে।
বিশ্বের সস্তা শহরের তালিকা
১. কারাকাস (ভেনেজুয়েলা),
২. দামেস্ক (সিরিয়া),
৩. তাসখন্দ (উজবেকিস্তান),
৪. আলমাটি (কাজাখিস্তান),
৫. ব্যাঙ্গালোর (ভারত),
৬. করাচি (পাকিস্তান),
৬. লাগোস (নাইজেরিয়া),
৭. বুয়েনস আয়ার্স (আর্জেন্টিনা),
৭. চেন্নাই (ভারত),
৮. নয়া দিল্লি (ভারত)।
Facebook Comments