হিজাব পরা নিয়ে তীব্র উত্তেজনার জেরে কর্ণাটকের সব স্কুল এবং কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাসাভরাজ এস বোম্মাই আগামী তিনদিনের জন্য সব স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বাসাভরাজ এস বোম্মাই বলেছেন, তিনি ‘শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে’ সব উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য উডুপির স্কুল থেকে শুরু হওয়া বিতর্ক রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্রীরা হিজাব পরা নিয়ে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দু’টি আবেদন করেছিল, যার শুনানি আজ, মঙ্গলবার। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোম্মাই বলেছেন, যতক্ষণ না হাইকোর্ট এই বিষয়ে কোনও রায় দেয়, ততক্ষণ স্কুলছাত্রীদের ইউনিফর্ম সংক্রান্ত রাজ্য সরকারের নিয়ম মেনে চলতে।
তিনি বলেন, ‘স্কুল-কলেজে ইউনিফর্ম নিয়ে নিয়ম তৈরি করা হয়েছে, যাতে সব শিক্ষার্থী একই রকম হয়। এই নিয়মগুলি সংবিধানেও উল্লেখ আছে এবং সেগুলি অনুসরণ করা আবশ্যক।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই নিয়মগুলি কর্নাটক শিক্ষা আইনেও লেখা আছে। এ-বিষয়ে আমরা বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছি।’
বিষয়টি নিয়ে মেয়েরা হাইকোর্টে আবেদন করে জানায়, ইসলামে হিজাব বাধ্যতামূলক। তাই তাদের অনুমতি দেওয়া উচিত। এদিকে একদম এগিয়ে হুবলিতে শ্রীরাম সেনার প্রমোদ মুথালিক বলেন, ‘আপনি ভারতকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান বানাচ্ছেন? আপনি যদি বোরকা বা হিজাব চান, তবে আপনি পাকিস্তানে যেতে পারেন।’ অন্যদিকে, ক্রমবর্ধমান বিতর্ক দেখে কর্নাটকের বিজয়পুরার দু’টি কলেজে (শান্তেশ্বরা পিইউ এবং জিআরবি কলেজ) দু’দিনের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে, উদুপির কলেজে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও কুন্দাপুরার সরকারি পিইউ কলেজ সোমবার ক্যাম্পাসে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার অনুমতি দিয়েছে। এর পাশাপাশি তারা আলাদা ক্লাসে বসবে বলেও নিয়ম কার্যকর করা হয়। কলেজ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গেটের বাইরে প্রতিদিনই বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলেন এই মেয়েরা।
১ জানুয়ারি, হিজাব পরার জন্য কর্নাটকের উদুপির একটি কলেজে ৬ জন মুসলিম ছাত্রীকে ক্লাসে যেতে বাধা দেওয়া হয়। এর পেছনে নতুন ইউনিফর্ম নীতিমালার কারণ দেখিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর পরে কর্নাটক হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করে প্রতিবাদ শুরু করে এই মুসলিম ছাত্রীরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, হিজাব পরার অনুমতি না দেওয়া সংবিধানের ১৪ এবং ২৫ অনুচ্ছেদের অধীনে তাঁদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। অনুরূপ ঘটনার আঁচ ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের অন্যত্রও। হিজাব পরার অপরাধে কুন্দাপুরা কলেজের ২৮ জন মুসলিম ছাত্রীকে ক্লাসে যেতে বাধা দেওয়া হয়। মেয়েদের হিজাব পরার প্রতিক্রিয়ায় কিছু হিন্দু গ্রুপ কলেজ ক্যাম্পাসে ছেলেদের জাফরান শাল পরতে বাধ্য করায়। এ বিষয়ে কর্নাটকের শিক্ষামন্ত্রী বি সি নাগেশ বলেছেন, ‘যেসব মেয়ে হিজাব পরার জন্য জোর দিচ্ছে তারা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে পারবে না।’ তিনি আন্দোলনরত ছাত্রীদের কলেজের আলাদা কক্ষে বসতে বললেও তাঁদের পড়ানো হয়নি।
Facebook Comments