বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সফট ড্রিংকস ডায়েট কোক-এ রয়েছে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর কারসিনোজেন। এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা হু এবং ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার বা আইএআরসি।
তাদের যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে এই ভয়ংকর তথ্য। কোকা কোলার ডায়েট কোক ব্র্যান্ড এ কৃত্রিম মিষ্টি আনার জন্য বহুল ব্যবহার করা অ্যাসপারটেম এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে ঘাতক কারসিনোজেন। যা ক্যালরি শূন্য হলেও ১ লিটার কোকে প্রায় ২২ চামচ চিনির সমান কাজ করে। মারাত্নক ক্ষতিকারক এই অ্যাসপারটেম শুধু মাত্র কোকে নয় বিভিন্ন সফট ড্রিংকস এ ,চুইংগামে বিপুল পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। ভারত ছাড়াও প্রায় ৯০ টি দেশে এই ডায়েট কোক বিপুল ব্যবসা করে। অধিকাংশ মানুষই শরীর সম্পর্কে সচেতন হতে ডায়েট কোক পান করেন।
এই অ্যাসপারটেমকে সত্তরের দশকে বিজ্ঞানীর ছাড়পত্র দিয়েছিল চিনির বিকল্প হিসাবে। নরওয়ে,ফিনল্যান্ড, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি কিছু দেশে এটি নিয়ে সন্দেহ থাকলেও গোটা বিশ্বে ব্যাপক ব্যবহার এই রাসয়নিকের। ২০ বছর পরের গবেষণায় দেখা যায় এর মধ্যে থাকা মিথাইল এসটার,অস্পর্টিক অ্যাসিড,এবং ফাইনালইথিলিন শরীরে ডিপোজিট হয়ে থাকছে এবং মানুষের মেটাবলিক সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে অনেক দিন পর। এতে থাকা হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন খুব ধীরে ধীরে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে, লিভার ফাংশনে প্রভাব ফেলছে, ধীরে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়াচ্ছে এবং প্রবল অনিদ্রা রোগ সৃষ্টি করছে।
কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আমেরিকার সেন্ট্রাল ড্রাগ এজেন্সি এর ক্লিনিকাল টেস্টের অনুমতি পায়নি।
এক বছর আগে হু এবং ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এজেন্সি ফর ক্যান্সারের তরফ থেকে এমনই ১৭ টি কেমিক্যাল নিয়ে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে বিভিন্ন বয়সের ১,০০,০০০ মানুষের মধ্যে সমীক্ষা ও ক্লিনিকাল টেস্ট করেন। তাতেই উঠে আসে এই ভয়ংকর তথ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগামী মাসেই তাদের রিপোর্ট জনসমক্ষে আনছে, একই সঙ্গে কোকা কোলা কোম্পানিকে এই রাসয়নিক এর নাম ও ক্ষতিকর দিকটা কোকা কোলার বোতলের গায়েই সতর্কতা হিসাবে লিখতে বলে দিয়েছে,ঠিক যেভাবে সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে সতর্কতা দেওয়া থাকে।
📌 কোকা-কোলা ঠিক কী
কোকা-কোলা বা ওই জাতীয় নরম পানীয় আদতে কার্বোনেটেড ওয়াটার বা জলে মেশানো কার্বন ডাই অক্সাইড। স্বাদ মিষ্টি করার জন্য তাতে চিনি বা তার বদলে অ্যাসপারটেম দেওয়া থাকে। আর তার সঙ্গে দেওয়া থাকে প্রিজারভেটিভ ও অন্য কিছু স্বাদবর্ধক উপাদান।
◼️ অ্যাসিড- কার্বন ডাই অক্সাইড জলের সঙ্গে মিশে যে অ্যাসিড তৈরি করে তা দাঁতের পক্ষে ক্ষতিকর বলে জানা গেছে। এতে ফসফোরিক অ্যাসিডও থাকে যা শরীর থেকে ভিটামিন ও বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান দেহ থেকে প্রস্রাবের আকারে বের করে দিতে শুরু করে।
◼️ চিনি- এই পানীয়তে থাকা অতিরিক্ত চিনি দাঁতের ক্ষয় থেকে শুরু করে স্থুলতা-সহ বেশ কিছু সমস্যার কারণ। আর অ্যাসপারটেম রাসায়নিক তো এখন কারসিনোজেন বলে প্রতিষ্ঠিত হয়েই গিয়েছে।
◼️ ক্যাফিন- কোকা-কোলার সবচেয়ে ক্ষতিকারক উপাদান সম্ভবত ক্যাফিন। স্বাদ সুস্বাদু করার জন্য এই রাসায়নিকটি এতে মেশানো হয়। ক্যাফিনের ক্ষতিকর ভূমিকার মধ্যে অন্যতম হল হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস করা।
◼️ ক্লাস ফোর ক্যারামেল কালার- কোকা-কোলাকে দেখতে আকর্ষণীয় করার জন্য যে কৃত্রিম রঙ মেশানো হয় সেই ক্যারামেল কালার কার্সিনোজেনিক (ক্যান্সার ঘটাতে পারে) বলে জানা গেছে। তবে এতে এই কৃত্রিম রঙের পরিমাণ এতই কম থাকে যে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিটা অ্যাসপারটেম এর থেকে কম।
◼️ মিনারেলস- কোকা-কোলাতে ক্ষতিকর মাত্রায় সীসা, ক্যাডমিয়াম, অ্যান্টিমনি ও ক্রোমিয়াম, পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর যে ১০টি পদার্থের কথা জানিয়েছে, তার শীর্ষে আছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম। যার ক্ষতিকর প্রভাব কারুর অজানা নয়।
Facebook Comments