“কুমারটুলি”, শুধু কলকাতার একটা জায়গার নাম নয় কুমারটুলি হল বাঙালির কাছে এক আবেগ। দুর্গাপুজোর সমার্থক হয়ে কুমারটুলি রয়েছে বাঙালির মনে যুগ যুগ ধরে। লোক গমগম করছে, ঠাকুরের বায়না হচ্ছে, কাঠামোয় মাটি লাগানো হচ্ছে বা ঠাকুরের চোখ আঁকা হচ্ছে এই হল কুমারটুলির পরিচিত চিত্র। কিন্তু উৎসবের মরসুম শেষ হওয়ার পর কুমারটুলি কেমন থাকে আমরা কতজন খোঁজ নিয়ে থাকি?? তাই আজ What’s New Life এর পক্ষ হতে আমি রৈনাক দত্ত প্রত্যেকদিন একটু একটু করে শেষ হতে চলা এক ঘুমন্ত কুমারটুলির হাল হকিকত নিয়ে হাজির হলাম আপনাদের কাছে।
কুমারটুলি বৃদ্ধ হয়েছে, ক্লান্ত হয়েছে। মহাকালের নিয়মে প্রত্যেকের মৃত্যু আছে, তেমনি আবেগেরও মৃত্যু হয়। তবে এখনই কুমারটুলিকে মৃত বলা যাবেনা কিন্তু সেখানকার প্রবীণ মানুষরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিনিয়ত শুনতে পাচ্ছেন দূর থেকে ভেসে আসা এক মৃত্যুঘন্টা। “দাদা আমি তো জীবন কাটিয়ে দিলাম এইভাবে কোনোমতে গাদাগাদি করে থেকে আর মাটি মেখে কিন্তু ছেলেটাকে ভালো জায়গায় পড়াচ্ছি।” বললেন প্রবীণ শিল্পী অমল পাল।
এই মুহূর্তে কুমারটুলি বেঁচে আছে সেরামিকের কাজ করে ও কিছু ছোটো ছোটো অর্ডারি কাজ করে। ভিড় নেই, ছবি তুলতে আসে না কেউ। “পুজোর একমাস আগে থেকে দিনে প্রায় হাজার টাকা আয় হয় ফটো তোলার টিকিট বিক্রি করে, আর মূর্তির ক্ষতি হলে চার্জ আলাদা।” গত কিছু বছর ধরে মানুষ মেতে উঠেছে ডিএসএলআর ক্যামেরাতে ও ফেসবুক মডেলিং এ, তারই পুরো ফায়দা তুলে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখছে কুমারটুলি।
ডিসেম্বরের দুপুর, শীতের মিয়ানো রোদে দাঁড়িয়ে চুল শুকানো, ফাঁকা গলি, অর্ধেক রঙ হওয়া মূর্তি, এঁটো হাতে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের আলোচনা, ভাতঘুম, ঠুক ঠুক করে ভেসে আসা কাঠামো বানানোর আওয়াজ, আলস্য ও খড়ের গন্ধ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কুমারটুলি আগামী বছরের ব্যস্ততার অপেক্ষায়।
Photography – Rainak Dutta
Facebook Comments