হেডলাইন পড়ে মনে হচ্ছে কি মহম্মদ রফি সাহেব এবং পানওয়ালা এক কি করে হয়? হয়..হয়!! এই কলকাতায় সব হয়। শুরুটা হয়ে ছিলো আজ থেকে প্রায় আশি বছর আগে। প্রথম কুড়ি বছর বাবা চালানোর পর দোকান এলো ছেলের হাতে। পাল্টে গেলো দোকানের খোলনলচে, ছড়িয়ে পড়ল তার নাম সারা বিশ্বে। ধর্মতলায় এলিট সিনেমার পাশের রাস্তায় নিউমার্কেটের দিকে ঢুকলেই প্রথমেই কানে আসবে যাবে রফি সাহেবের কালজয়ী সব গান। উৎসুক মন আপনার চোখকে এদিক ওদিক চাইতে বাধ্য করবে এবং আপনার চোখে পড়বে মহম্মদ মুনিরুুুদ্দিনের পানের দোকান, “তাজ মহল পান শপ”। পুরো দোকানটি রফি সাহেবকে উৎসর্গ করে বিভিন্ন সময়ের ছবি দিয়ে সাজানো। পান পাওয়া যায় মাত্র দুইরকমের। পান তো একটা উপলক্ষ মাত্র, জীবিকাশক্তি হল মহম্মদ রফির গান। বৃদ্ধ মানুষটি রফি সাহেবকে নিয়ে বাঁচেন বা বাঁচার রসদই হলেন রফি সাহেব, এটা বলা যায়। রফি সাহেব এসেছিলেন দোকানে দুইবার ১৯৬৬ ও ১৯৭৩ সালে। এছাড়াও কলকাতায় আসলে স্পেশাল পান যেত সাহেবের জন্য দোকান থেকে। রফি ভক্তির নিদর্শন স্বরূপ রয়েছে রফি সাহেবের সমস্ত গানের কালেকশন এবং কিছু দুষ্প্রাপ্য বা অপ্রকাশিত গানের ক্যাসেট ও গ্রামোফোনের সংগ্রহ। বর্তমানে ২৪শে ডিসেম্বরে জম্মদিনে পুলিশের অতি সক্রিয়তার জন্য না পারলেও ৩১শে জুলাই রফি সাহেবের মৃত্যুদিনে দোকানের সামনে বড় পর্দা লাগিয়ে সংগ্রহে থাকা নানান মুহূর্তের ভিডিও দেখানো ও বিভিন্ন অনুষ্টানের আয়োজন করেন প্রতি বছর।
স্বীকৃতি পেয়েছেন দেশ-বিদেশের অনেক জায়গা থেকে। রয়েছে তার উত্তরসূরি চার ছেলে। তবু আজো নিয়ম করে বৃদ্ধ মানুষটি এসে বসেন দোকানে, পান সাজেন ও গুনগুন করেন “আজ মৌসম বরা বেঈমান হ্যায়” বা “বাহারো ফুল বারসাও”। আমি রৈনাক দত্ত, What’s New Life এর তরফ থেকে কথা বললাম অমায়িক মানুষটির সাথে, দু-কলি গানও গাইলেন, গানের ভিডিও লিংকটি রইল নিচে। খেলাম মিষ্টি পান, আপনাদের জন্য রইল ছবি।
আজ যখন কোনো পথচলতি মানুষ দোকানের সামনে হটাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে জিজ্ঞাসা করেন “এখানে মহম্মদ রফি পান খেয়েছিলেন?” লাজুক হেসে ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিয়ে “The পানওয়ালা” জবাব দেন, “পান দেবো বাবু?”
Photographer – Rainak Dutta
Facebook Comments