“এই ডুক ডুক ডুক ডুক দেখো বাবু খিলা দেখো রে,
বাঁদর লাচবে, ছোকরি লাচবে।
আসমান থিকা পাইসা পড়বে।।”
এই গানটা আমি নিশ্চিত আমি চেনেন। যদি না চিনতে পারেন বলে দিই এটা মহানায়ক উত্তমকুমারের শেষ সিনেমা “ওগো বধু সুন্দরী” এর বিখ্যাত গান। ভাবছেন হটাৎ এই গানের কথা কোনো, মহানায়কের তো অনেক জগতখ্যাত গান রয়েছে। আমি আজ এই গান নিয়ে বলব না কিছু, তবে আজ যাদের কথা বলব তাদেরকে বোঝানোর জন্য এই গান প্রতীকী হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
“মাদারি কা খেল” শোনা শোনা লাগছে না? ছোটো বেলায় বাড়িতে বাঁদর বা ভাল্লুক নিয়ে লোক আসতো সঙ্গে ঢোল বা ডুগডুগি। বাজনার তালে তালে আপনার মনোরঞ্জন করত তারা বা কখনো কখনো বাচ্ছা ছেলে মেয়েও বাজনার তালে নাচ দেখাতো।
হ্যাঁ সেই “মাদারি কা খেল” এর কথাই আমি What’s New Life এর প্রতিবেদক রৈনাক দত্ত আজ বলব।
আগের “লাশ-ট্রেন” স্টোরি কি পড়েছেন? সেখানেই বলেছিলাম আমি অফিস যাই শিয়ালদহ স্টেশন হয়ে। কালকেও ট্রেনে উঠে বসে আছি, রোজের সঙ্গী হেডফোন আমার কানে। এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে আমার চোখ পড়ল ওদের দিকে। ওরা হল আজাদ আর খুশবু। ভাই-বোন। আজাদের মুখে অদ্ভুদ করে একটা গোঁফ আঁকাটা আমার ক্যামেরাটা ব্যাগ থেকে বের করতে বাধ্য করল। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম ক্যামেরাটা নিয়ে ওদের দিকে, কয়েকটা ছবি তুলে বসে পড়লাম ওদের পাশে ট্রেনের মেঝেতেই।
“আমাদের বাড়ি রিষড়া, ওই যে ওই পানিওয়ালার ওখানটা থেকে টেরেনে উঠি।” খুশবু তো দিদি তাই গুছিয়ে বলল আর আজাদ এতই ছোটো যে ভালো করে নামটাও বলতে পারল না, দিদির থেকেই জেনে নিলাম।
ট্রেন ছাড়তেই শুরু হল ডুক ডুক করে ঢোলের বাজনা, দিদি বাজাচ্ছে আর আজাদ খেলা দেখাচ্ছে। মাথার টুপিতে একটা লাট্টু দড়ি দিয়ে বাঁধা সেটা কিছুক্ষণ ঘুড়িয়ে গোল একটা চাকতির মধ্যে দিয়ে শরীরের নানান কসরত দেখিয়ে ছোট্ট আজাদ সবার কাছে হাত পেতে টাকা নিতে শুরু করল।
আজাদ আর খুশবু কথা দুটি হিন্দি, মানে হল স্বাধীনতা আর সুগন্ধ। আমরা তো সেই কবে স্বাধীনতার সুগন্ধ পেয়ে গেছি তাই না?
পরিবারে কারা আছে জানা হয়নি। এইটুকু জানি ওরা হাসেনা, শুধু ঢোলের তালে তালে কোমর দুলিয়ে হাসাতে জানে।
Photo – Rainak Dutta
Facebook Comments