ইউপির বাদাউনে হৃদয় বিদারক দুই শিশু হত্যার ঘটনা সবাইকে চমকে দিয়েছে। অভিযুক্ত সাজিদ, যে ঘরে ঢুকে দুই নাবালক শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল, পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের নথিভুক্ত এফআইআর রিপোর্টও বেরিয়ে এসেছে। বাদাউন হত্যা মামলার এফআইআর রিপোর্টে অনেক চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে। প্রতিবেদনে শিশুটির বাবা স্পষ্টভাবে বলেছেন, অভিযুক্ত সাজিদের ভাই জাভেদও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ৫ হাজার টাকা সাহায্য চাওয়ার অজুহাতে বাড়িতে ঢুকে পড়েন সাজিদ।
এফআইআর রিপোর্টে পুরো সত্যতা জানিয়েছেন বাবা
শিশুটির মা সাজিদকে বলেছিলেন যে তিনি টাকা এনে এখন তাকে দিচ্ছেন। তারপর সাজিদ পীযূষকে পুদিয়া আনতে বলল এবং সে পুদিয়া আনতে গেল। তখন সাজিদ বাচ্চাদের মাকে বলে যে আমি জানি না, আজ আমি নার্ভাস লাগছে, আমাকে একটু বারান্দায় ঘুরতে দাও। সাজিদ আয়ুশকে পানি আনতে বললে সে তার ভাই জাভেদকেও ভিতরে ডাকে। জাভেদ সাজিদ এবং আমার দুই ছেলে আয়ুশ ও আহান তার সাথে উপরে উঠে গেলেন।
এভাবেই ধরা পড়ে অভিযুক্তরা
বাচ্চাদের মা টাকা নিয়ে বাইরে এলে সাজিদ ও জাভেদ বসার ঘর থেকে নেমে আসে।সাজিদ ও জাভেদের হাতে রক্তে ভিজে একটি ছুরি ছিল। আর ওই মহিলাকে (সন্তানের মা) দেখা মাত্রই তিনি বললেন, আজ আমি আমার কাজ শেষ করেছি। তার হাতে ছুরি দেখে আমার স্ত্রী আতঙ্কে চিৎকার করলে এলাকার অনেকেই ছুটে আসেন। কে সাজিদ-জাভেদকে ধরার চেষ্টা করেছে। এ সময় জাভেদ সেখান থেকে পালিয়ে গেলে সাজিদ জনতার হাতে ধরা পড়েন। মহিলা উঠে গিয়ে দেখে, দুই ছেলেই রক্তে ভিজে মরে গেছে। এরপর জাবেদ আমার ছেলে পীযূষকে হত্যার উদ্দেশে ছুরি দিয়ে হামলা করে, এতে তার হাতে গুরুতর জখম হয়।
এফআইআর-এ বলা হয়েছে, এই ঘটনার পর সেখানে উপস্থিত লোকজন সাজিদকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ঘটনাস্থলে বিপুল জনতা জড়ো হওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ভিড় ও অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায় সাজিদ। শিশুটির বাবা বলেন, সাজিদ ও জাভেদের সঙ্গে তার কোনো শত্রুতা ছিল না। আমি জানি না কেন এই দুইজন আমার সন্তানকে হত্যা করেছে।
কী বললেন শিশুটির মা?
মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে পুরো ঘটনার কথা জানান, হত্যার কোনো কারণ নেই। সে দোকানে এলো.. সে বলল ভাবী, আমাকে পাঁচ হাজার টাকা ধার দাও.. কিছু সাহায্য দরকার… তাই আমি পাঁচ হাজার টাকা বের করে তাকে দিলাম.. এর পর সে সেখানে দাঁড়িয়ে বলল, আমার স্ত্রী হাসপাতালে আছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তার প্রসবের জন্য 11 টার সময় দেওয়া হয়েছে। আমি ওর বাবার সাথে কথা বললে উনি বললেন কোন সমস্যা নেই, টাকাটা দিন, উনি সকালেই দিয়ে দেবেন… ভালো, সমস্যা নেই। আমার সাথে কোন শত্রুতা ছিল না.. এখন তাকে এই কাজটি করানো হয়েছে.. বা কি হয়েছে.. এখন শুধু তিনিই বলতে পারবেন কি হয়েছে.. কেন এমন করলেন?
সঙ্গীতা বলেন, “জাভেদ বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, যখন সে (সাজিদ) আসে, সে ছুরি লুকিয়ে রেখেছিল। এটা তার হাতে ছিল না। সে এলে আমি বললাম কোন সমস্যা নেই.. বসুন, চা খেয়ে যান.. তারপর তিনি শিশুটিকে চাপা দিয়ে পার্লারে নিয়ে গেলেন.. সেখান থেকে তিনি তাকে উপরে নিয়ে গেলেন এবং তারপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে প্রথমে আয়ুশকে আঘাত করেন এবং তারপর আমার ছোট ভাই। খুন।”
এ কথা বলে সঙ্গীতা কান্নাকাটি শুরু করে এবং বলেন, তিনি (সাজিদ) অন্য শিশুকেও আক্রমণ করেন কিন্তু তার ছুরি পড়ে যায়, পরে ছেলেটি ছুরিটি ফেলে দেয়। ছুরি ছুড়ে মারার সাথে সাথে সে ছুটে আসে নিচে। আমরা শুধু চাই তাকে আমাদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক কেন সে এমন করল? তার সাথে আমাদের কোন শত্রুতা ছিল না, শুধু জাভেদই বলবে কেন সে এটা করেছে।কেউ এটা করেছে নাকি সে নিজে করেছে?
Facebook Comments