AI-এর গডফাদার হিসেবে পরিচিত জিওফ্রে হিন্টন গুগল থেকে পদত্যাগ করেছেন। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, হিন্টন গুগল থেকে পদত্যাগ করেছেন যাতে তিনি এখন যে প্রযুক্তির বিকাশে সহায়তা করেছিলেন তার বিপদ সম্পর্কে কথা বলতে পারেন। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, প্রায় এক দশক ধরে এআই-এর জন্য গুগলের সঙ্গে কাজ করার পর তিনি এখন এই প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তিত।
জিওফ্রে হিন্টন, তার 2 জন ছাত্রের সাথে (ইলিয়া সুটস্কেভার এবং অ্যালেক্স ক্রুশেভস্কি), একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন যা হাজার হাজার ছবি বিশ্লেষণ করতে পারে। হিন্টনের কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করতে গুগল প্রায় 3,599 বিলিয়ন টাকা খরচ করেছে।
হিন্টনের সিস্টেম চ্যাটজিপিটি এবং বার্ডের মতো চ্যাটবট সহ ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী প্রযুক্তির জন্ম দিয়েছে।
জেফ্রি হিন্টন বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের ক্ষেত্রে তিনি যেসব কাজ করেছেন, তার জন্য তিনি অনুতাপ বোধ করেন। মানব মস্তিষ্কের সমতুল্য সিস্টেম – যাকে বলে ‘নিউট্রাল নেটওয়ার্ক’, এবং এগুলোর মানুষের মতই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার ক্ষমতা – যার নাম ‘ডিপ লার্নিং’ – এ দুটি ক্ষেত্রে ড. হিন্টনের মৌলিক গবেষণা চ্যাট জিপিটির মতো এআই সিস্টেম তৈরির পথ সৃষ্টি করেছে।
বিবিসিকে জেফ্রি হিন্টন বলেন, এআই চ্যাটবট থেকে এমন কিছু বিপদ হতে পারে যা ‘রীতিমত ভয়ংকর’। এই মুহূর্তে এরা আমাদের চাইতে বুদ্ধিমান নয়, কিন্তু শিগগিরই তারা তা হয়ে যাবে বলে আমার মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, জিপিটি-ফোরের মতো জিনিসগুলো সাধারণ জ্ঞানের পরিমাণের দিক থেকে একজন মানুষকে অনেকখানি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রিজনিং বা যুক্তিতর্কের ক্ষমতার দিক থেকে অবশ্য তারা ততটা ভালো নয় – কিন্তু তারা এখনই সাধারণ যুক্তিতর্ক করতে পারছে। এখন যে হারে অগ্রগতি হচ্ছে – তাতে খুব দ্রুতই এতে আরও উন্নতি হবে । সুতরাং আমাদের এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ করতেই হবে।
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে হিন্টন বলেন, খারাপ লোকেরা কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তাকে খারাপ কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারে।
এক্ষেত্রে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনেরও উদাহরণ দেন।
তিনি বলেন, এটি এমন একটি বিষয়, যে ধরুন আপনার ১০ হাজার লোক আছে, এবং একজন লোক একটা তথ্য জানলেই বাকি সবাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা জেনে যাবে। এভাবেই একটি চ্যাটবট কোনো একজন মানুষের চাইতে বেশি জেনে ফেলতে পারে।
হিন্টনের পদত্যাগের পর এক বিবৃতিতে গুগলে প্রধান বিজ্ঞানী জেফ ডিন বলেন, এআইয়ের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গী নিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ, এবং আমরা সবসময়ই নতুন ঝুঁকিগুলোকে বুঝতে এবং সাহসের সঙ্গে নতুন নতুন আবিষ্কার করে যাচ্ছি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সম্প্রতি গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বেশ কিছু নামী ব্যক্তি ও দেশ। মার্চ মাসেই একদল উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞ একটি খোলা চিঠিতে এআই প্রশিক্ষণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এতে সইকারীদের মধ্যে আছেন টুইটার ও টেসলার প্রধান ইলন মাস্ক, অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক এবং ডিপমাইন্ড ও ফিউচার অব লাইফ ইনস্টিটিউটের মত প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ গবেষকরা।
তারা বলছেন, এআই প্রযুক্তি নিয়ে যে প্রতিযোগিতা চলছে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এতে ভবিষ্যতে মানুষের বুদ্ধির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার মতো সিস্টেম তৈরি হতে পারে যা সমাজ ও মানবতার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
Facebook Comments