সফলভাবে উৎক্ষেপণের পরেও সাফল্য অধরাই থেকে গেল। আজই সকালে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ হয়। এরপরই ছোট্ট স্যাটেলাইটটি ভুল কক্ষপথে প্রবেশ করে। ফলে এই স্যাটেলাইটের আরও কোনও কার্যকারিতা থাকল না। দুপুরের দিকে এমনই দুঃসংবাদ দিল ইসরো।
ভারতীয় স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ISRO পক্ষ থেকে এক বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে যে, ‘SSLV-D1 ছোট স্যাটেলাইটটি ৩৫৬ কিমি চওড়া এবং ৭৬ কিমি লম্বা এলিপটিক্যাল কক্ষপথের বদলে ভুলবশত সার্কুলার কক্ষপথে প্রবেশ করেছে। এর ফলে ওই স্যাটেলাইটের আর কোনও কার্যকারিতা থাকল না। কী ধরনের ত্রুটির কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। কোনও কারণবশত স্যাটেলাইটের সেন্সর ঠিকভাবে কাজ করেনি। যার জন্য এই ঘটনা।’
স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ভারতীয় স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ISRO পক্ষ থেকে সবথেকে ছোট বাণিজ্যিক রকেট SSLV উৎক্ষেপণ করা হয়। আজ সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার উৎক্ষেপণ করা হয়। উল্লেখ্য, মাঝরাত থেকেই শুরু হয়েছিল রকেট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি। রাত ২ টো থেকে শুরু হয়েছিল কাউন্টডাউন, পর পর ৭ টি ধাপে উৎক্ষেপণ হয় এই রকেটের। ইসরোর ক্ষুদ্রতম এই রকেটে ছিল একটি স্টুডেন্ট স্যাটেলাইট ও একটি আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট রয়েছে। এর মধ্যে স্টুডেন্ট স্যাটেলাইটটি স্কুল পড়ুয়ারা নির্মাণ করেছে।
(1/2) SSLV-D1/EOS-02 Mission update: SSLV-D1 placed the satellites into 356 km x 76 km elliptical orbit instead of 356 km circular orbit. Satellites are no longer usable. Issue is reasonably identified. Failure of a logic to identify a sensor failure and go for a salvage action
— ISRO (@isro) August 7, 2022
কিন্তু এরপরেই ধাক্কা খায় ইসরো। এই রকেটের উৎক্ষেপণের মুহূর্তের বেশ কিছু তথ্য হারিয়ে যায়। অর্থাৎ কিছু তথ্য আসা বন্ধ হয়ে যায় মহাকাশ থেকে। তবে, ইসরোর বিজ্ঞানীরা সেইসব তথ্য ফের ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেই প্রথমে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সমস্যা আরও বাড়তে শুরু করে। চূড়ান্ত পর্বে গিয়ে, আর কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি। এরপরই ইসরোর বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে, স্যাটেলাইটটি ভুল কক্ষে প্রবেশ করেছে এবং নিজের কার্যকারিতাও হারিয়েছে এর ফলে।
চূড়ান্ত বিবৃতি প্রকাশের আগে এদিন ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ বলেন, ‘এসএসএলভি-ডি১ আশানুরূপভাবেই প্রতিটি ধাপে সঠিকভাবে কাজ করেছে। একেবারে অন্তিম পর্যায়ে কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। আমরা তথ্য বিশ্লেষণ করছি। শীঘ্রই উপগ্রহের অবস্থান এবং তার বিষয়ে আরও কিছু তথ্য জানতে পারব।’
প্রসঙ্গত, ইসরোর যে রকেটটি এদিন উৎক্ষেপণ করা হয়, তা ছিল ক্ষুদ্রতম। ইসরোর স্মল স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকলটি লম্বায় ছিল মাত্র ৩৪ মিটার। স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে ৭৫টি পৃথক অংশ ছিল এই ক্ষুদ্র স্যাটেলাইটটিতে। এছাড়াও ইসরো সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘স্পেস কিডজ় ইন্ডিয়া’ নামক একটি মহাকাশ গবেষণা সংস্থার অধীনে ৭৫০ স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী একসঙ্গে মিলে এই স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করেছে। ‘আজাদিস্য়াট’ নামক এই উপগ্রহটি স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তির উদ্দেশ্যেই বানানো হয়েছে। যে সব পড়ুয়ারা এই স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করেছিল, আজ সেইসব ছাত্রীরাও উপস্থিত ছিল উৎক্ষেপণের সময়। শুধু প্রযুক্তি নয়, স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন উপলক্ষে মহাকাশে ভারতের তেরঙ্গা ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ছিল এই স্যাটেলাইটটির। ছোট্ট স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেত্ত,লক্ষ্য ছিল, স্যাটেলাইট EOS-02 এবং ‘আজাদিস্য়াট’-কে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপন করা। যেখান থেকে ইসরোকে প্রত্যেক মুহূর্তে ছবি পাঠাতে পারত এই স্যাটেলাইট।
Facebook Comments