চারদিকে কোলাহলময় বদ্ধ নগরীর কর্মযজ্ঞে মানুষ নিজেকে নিয়েই সদা ব্যস্ত্ম। সকালের ঘুম ভাঙ্গা থেকে রাতে ঘরে ফেরা পর্যন্ত্ম যেন অন্য কিছু ভাবার সময় নেই। সেকেন্ড মিনিট ঘণ্টা করে কেটে যায় দিন। চলে যায় বছর। শহুরে জীবনের এই টানাপোড়নেও তবু মাঝে-মাঝে মনে পড়ে শৈশবের ফেলে আসা স্মৃতি। কত আবেগ! কত প্রেম! কত ঐতিহ্য। ছুটে যেতে ইচ্ছা করে গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ রোদে বটের ছায়ায়, কিংবা শীতের সকালে আগুন পোহানের মাঠে। জারি সারি ভাটিয়ালি শুনতে ইচ্ছা করে। ফসল কাটার আনন্দে নবান্নের উৎসবে মেতে উঠতে ইচ্ছা করে।
এই আবেগ গ্রামে বেড়ে উঠা শহরের বাসিন্দা সবার। তবুও কর্মব্যস্ত্মতায় ভুলে থাকতে হয় সব। আর শহরে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্ম তো এই আবহমান ঐতিহ্য থেকে বহু দূরে। চার দেয়ালে বন্দি জীবন। ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মোবাইল, ট্যাব কিংবা কম্পিউটারই তাদের পরিসর। তবে কি গ্রামবাংলার সেই ঐতিহ্য আর দেখবে না শহুরে বাসিন্দারা?
পুরোপুরি সেই ঐহিত্য দেখা না গেলেও পুরনো স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র রবীন্দ্র সরোবরে তিন দিনব্যাপী নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আজ ছিল এই উৎসবের প্রথম দিন।
এই অনুষ্ঠানে রয়েছে জারি-সারি-ভাটিয়ালির মতো লোকজ সংগীত পরিবেশনা ও গ্রামীণ সংস্কৃতির অনুষ্ঠান। উৎসবে ঐতিহ্যের নবান্নের পিঠার আয়োজনও রয়েছে। এ জন্য সাজানো হয়েছে ৩০টি পিঠাঘর। থাকছে শিশুদের জন্য বায়োস্কোপ দেখার সুযোগ। উৎসবে সাপের খেলা দেখানোসহ থাকবে আরও কিছু চমকপ্রদ অনুষ্ঠান। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য পুঁথিপাঠ, গাজীর কিচ্ছা, পালা গান, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, পালকি, লাঠিখেলা ও বানর নাচ। এ ছাড়া ঢেঁকি, কুলা, মাথাল, জাঁতাকলসহ ঐতিহ্যবাহী নানা পণ্যের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
তিন দিনব্যাপী এই আয়োজন সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত্ম সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ছবি : হোয়াটস নিউ লাইফ
Facebook Comments