নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) চুপ থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে আইডিবিসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে সুনির্দিষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
রবিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রেডিসন হোটেলে জেদ্দাভিত্তিক ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মিয়ানমারকে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য চাপ অব্যাহত রাখার জন্য আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সুনির্দিষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিম জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে আশির দশক থেকেই দমন-পীড়ন চালায় মিয়ানমার। তখন থেকে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশের দিকে ছুটে এসেছে রোহিঙ্গারা।
তবে গত বছরের আগস্টে সেনা অভিযানে হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতনের মুখে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটে বাংলাদেশে। কয়েক মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে বিভিন্ন সময় আসা আরও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বাংলাদেশে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্ব উদ্বেগ জানিয়েছে। এই জনগোষ্ঠীর সহায়তায় এগিয়ে এসেছে সবাই। সেই সঙ্গে তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত আছে।
তবে মিয়ানমার নিজ দেশের মানুষদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে টালবাহানা করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক ও একটি চুক্তি করার পরও প্রত্যাবাসন শুরু করছে না তারা।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আইডিবি চুপ থাকতে পারে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) নিপীড়িত মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন জাতিগত নির্মূলের মুখোমুখি, তখন আইডিবি চুপ থাকতে পারে না। কাজেই জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য আইডিবিকে আমি দৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’
নতুন প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলবো জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো। সকলে মিলে নতুন প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলবো, এমন পরিকল্পনা নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি , ২০০ প্রকার সরকারি সেবা জনগণের হাতে পৌঁছে দিয়েছি। ১৫ কোটি তিন লাখ মোবাইল সিম এখন মানুষ ব্যবহার করে। প্রযুক্তিতে আমরা অনেক এগিয়েছি। মহাশূন্যে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ৫৭তম স্যাটেলাই উৎক্ষেপণকারী দেশ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নারী উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা করেছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অংশ গ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে । নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে। নারী পোশাক শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করছি ।’
দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমরা কাজ করছি । বন ও পরিবেশ রক্ষায় আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
Facebook Comments