গত বছর মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগানটি বেশ আলোচিত হয়েছিল। আসলে, এই স্লোগানের সাহায্যে, মোহাম্মদ মুইজ্জু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। এখন ভারতের আরেক প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ‘ইন্ডিয়া আউট’।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশে ভারত আউট আন্দোলন জোরদার হতে শুরু করেছে। পিনাকী ভট্টাচার্য, একজন বিখ্যাত ইউটিউবার, এই আন্দোলন শুরু করার পিছনে। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব এই প্রচারণায় যোগ দেন, যার কারণে ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
‘ইন্ডিয়া আউট’। গত কয়েকমাস ধরে বাংলাদেশিদের মুখে মুখে এবং সেদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে এই শব্দবন্ধটি। না, এটা কোনও ক্রিকেটীয় স্লোগান নয়। মূলত ভারতীয় পণ্য বর্জন ও বয়কটের ডাক দিয়ে সাধারণ মানুষের একটি অংশ প্রচারে শামিল হয়েছেন। সেই প্রচারে সম্প্রতি ইন্ধন জোগাতে শুরু করেছে বাংলাদেশের মূল বিরোধী দল বিএনপি ও আরও কয়েকটি সংগঠন। আর তাকে কেন্দ্র করেই আশঙ্কার কালো মেঘ কাঁটাতারের এপারে।
মহদিপুর এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রসেনজিত্ ঘোষের বক্তব্য, ‘এখন পর্যন্ত বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি ঠিকই, তবে ভবিষ্যতে কী হবে বুঝতে পারছি না। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’
মূলত তিস্তার জল না পাওয়া এবং মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির তৈরির প্রসঙ্গকে সামনে রেখে চলছে বয়কটের প্রচার। সেইসঙ্গে রয়েছে হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের ‘বোঝাপড়া’র ইস্যুও। ও’পারের এই আওয়াজ পৌঁছে গিয়েছে এ’পারেও। এখনও পর্যন্ত সেই অর্থে বড় প্রভাব না পড়লেও, কিছুটা হলেও ব্যবসা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। এর পিছনে যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি রয়েছে, তাও বুঝতে পারছেন তাঁরা।
কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আনদালিব ইলিয়াসের বক্তব্য, ‘এধরনের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখা উচিত। সব দেশেই এমন কিছু মানুষ থাকেন। ক্রিকেট নিয়ে যা হয়েছে, এখন যা হচ্ছে, সমস্ত কিছুই সাময়িক। দুই দেশের মৈত্রীর যে সম্পর্ক রয়েছে, তাতে এই ধরনের ঘটনার প্রভাব পড়বে না।’
ভারতবিরোধী এই স্লোগানের পিছনে বিএনপির হাত রয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ এনেছে আওয়ামি লিগ। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহণমন্ত্রী ও আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার ঢাকায় সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার দুরভিসন্ধি বিএনপির মানসিক বৈকল্যের বহিঃপ্রকাশ। যাঁরা বয়কটের কথা বলছেন, দেশের মানুষ তাঁদেরই বয়কট করে দেবে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক অনেকবারই হয়েছে। অধিকাংশ বৈঠকেই উঠে এসেছে তিস্তা প্রসঙ্গ। কিন্তু ‘জল-সংকট’ কাটেনি। এবার তিস্তার জল না পাওয়ার বিষয়টিকে উসকে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে। যার ফলে ‘ইন্ডিয়া আউট’, স্লোগান চলছে বঙ্গবন্ধুর দেশে।
ভারত থেকে পাথরের পাশাপাশি গম, চাল, ভুট্টা সহ বিভিন্ন ধরনের পানীয়, কসমেটিক্স সহ অনেক জিনিস আমদানি করে বাংলাদেশ। ফলে চিন্তায় পড়েছেন এ’পারের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে তাঁরা যে বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন, তা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে। বাংলাদেশে প্রসাধনী রপ্তানিকারক উত্তরবঙ্গের এক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘যেভাবে ভারতবিরোধী স্লোগান চলছে, তাতে তো কিছুটা চিন্তায় থাকতেই হবে। তবে ওখানকার প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ করবেন বলে আশা রাখি।’
ভারত অবশ্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এই রাজনীতি এবং পণ্য বয়কটের ডাককে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না। ক’দিন আগেই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘মিডিয়ায় আপনারা যা দেখবেন, তার সবটা বিশ্বাস করার দরকার নেই।’ নয়াদিল্লি মনে করছে, বাংলাদেশে ভারতবিরোধী এই প্রচার সেই অর্থে মানুষের মনে দাগ কাটতে পারেনি। তাই এখনই এ নিয়ে বিশেষ চিন্তার কিছু নেই। কারণ সরকারিভাবে ভারতীয় পণ্য বয়কটের কোনও সিদ্ধান্ত নেই। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভারতের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ।
সেই কথা শোনা যাচ্ছে নর্থবেঙ্গল এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ব্রিজকিশোর প্রসাদের গলাতেও। তাঁর বক্তব্য, ‘বাংলাদেশ নানাভাবে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। ফলে ওঁরা বয়কট করলে ওঁরাই সমস্যায় পড়বেন। ফলে বয়কটের ডাক বেশিদিন চলবে না।’
সূত্রঃ উত্তরবঙ্গ সংবাদ
Facebook Comments