বাংলাদেশি তরুণী মোমেনা সোমাকে অস্ট্রেলিয়ার আদালত ৪২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। বুধবার (৫ জুন) আদালত এ রায় ঘোষণা করে। নিউ সাউথ ওয়েলসে এক ব্যক্তিকে সহিংস জিহাদের অংশ হিসেবে হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে তাকে এ সাজা দেওয়া হয়েছে। মেলবোর্নে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি লেসলি অ্যান টেইলর একে ‘ঠান্ডা মাথার হত্যা প্রচেষ্টা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ভিক্টোরিয়ান কারা ব্যবস্থা অনুযায়ী, সোমাকে কমপক্ষে ৩১ বছর ছয় মাস কারাগারে থাকতে হবে।
গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি নিউ সাউথ ওয়েলসে রজার সিংগারাভেলু নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরি নিয়ে হামলা চালায় মোমেনা সোমা। বাংলাদেশ থেকে পড়াশোনা করার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ৯ দিন পরই সে এ হামলা চালায়। হামলার সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তবে রজার প্রাণে বেঁচে যান। পরবর্তীতে এ ঘটনার পর তার সম্পর্কে জানার জন্য ঢাকার মিরপুরে তাদের বাড়িতে গেলে তার ছোট বোন আসমাউল হুসনা সুমনা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তার ওপর ছুরি নিয়ে হামলা চালায়। তাদের বিষয়ে তদন্তের জন্য অস্ট্রেলীয় ও বাংলাদেশি পুলিশ একে-অপরকে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে থাকে।
পরবর্তীতে মোমেনা সোমা অস্ট্রেলিয়ার আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সহিংস জিহাদের জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার অভিযোগে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। আর এই বুধবার তার বিরুদ্ধে বুধবার সাজা ঘোষণা করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার বিচারপতি টেইলর বলেন, সোমা ভেবেছিল তার হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তি মারা যাবেন। এ নিয়ে তার কোনো অনুশোচনাবোধ নেই এমনকি সে জিহাদি মতাদর্শ থেকে সরে আসতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বিচারপতি তাকে স্বাভাবিক পথে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে হতাশা প্রকাশ করেন।
সোমাকে বিচারপতি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আপনি পুলিশকে বলেছেন যে আইএস খলিফার নির্দেশ পেয়েই আপনি অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন। আপনার কর্ম ও কথা অস্ট্রেলীয় কমিউনিটির মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। কিন্তু তারা (আইএস) আপনাকে শহীদ বানাতে পারেননি। আপনাকে ইসলামের আলোকবর্তিকা বানাতে পারেনি তারা। জান্নাতে যাওয়ার জন্য আপনাকে সবুজ ডানাও দিতে পারেনি। তারা আপনাকে সাধারণ একজন অপরাধী বানাতে পেরেছে।’
অন্যদিকে মামলার শুনানিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সময় সোমা একটি ছুরি নিয়ে গেছে। হামলার কয়েকদিন আগে একটি ম্যাট্রেসের ওপর সে বসে বসে ওই ছুরি নিয়ে অনুশীলন করতো।
এছাড়া গ্রেফতার হওয়া মোমেনা সোমার ছোট বোন আসমাউল হুসনা সুমনা গত বছর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ থেকে আইএসে যোগ দেওয়া ‘ফরেন ফাইটার’দের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সোমার। সে নিজেও যুদ্ধ করতে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় যেতে চেয়েছিল। এজন্য তুরস্কের আতিলিম ইউনির্ভাসিটি থেকে স্কলারশিপও জোগাড় করেছিল। কিন্তু ঢাকার টার্কিশ অ্যাম্বাসি তাকে ভিসা না দেওয়ায় তার আর যাওয়া হয়নি। এরপর অস্ট্রেলিয়ার একটি ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ নিয়ে সেখানে গিয়ে ‘সিঙ্গেল অ্যাটাক’করে।
সে সময় সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, মোমেনা সোমা অনলাইনে আল-কায়েদা এবং আইএসের ভিডিও দেখে র্যাডিক্যালাইজড হয়েছে।
Facebook Comments