প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে সাংবাদিকতায় বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক ‘পুলিৎজার পুরস্কার’ পেলেন বাংলাদেশি চিত্রসাংবাদিক মোহাম্মদ পনির হোসেন। পুলিৎজারকে বলা হয় সাংবাদিকদের অস্কার পুরস্কার। এই বছর আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন ও ফটোগ্রাফিতে যুক্তরাজ্যের সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এই পুরস্কার অর্জন করে। রয়টার্সের পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চরম দুর্দশা নিয়ে প্রকাশিত ১৬টি ছবি পুলিৎজার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। হৃদয়বিদারক ছবিগুলি তুলেছিলেন রয়টার্স ফটোগ্রাফি দলের ৭জন ফটোগ্রাফার। সেই দলের অন্যতম সদস্য পনির হোসেন তুলেছেন তিনটি ছবি।
পনিরের তোলা তিনটি ছবির একটিতে দেখা যাচ্ছে, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে একটি নৌকা ডুবে যাওয়ার পর এক রোহিঙ্গা মা তার ৪০ দিনের শিশুর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বিলাপ করছেন আর কাঁদছেন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে নৌকায় করে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে নৌকাডুবিতে সেই সন্তানের মৃত্যু হয়। মর্মান্তিক সেই মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন মোহাম্মদ পনির হোসেন। তাঁর অপর দু’টি ছবির একটিতে দেখা যাচ্ছে গত বছরের আগস্টের শেষের দিকে সীমান্তের কাছে বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় একদল রোহিঙ্গা তুমুল বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি তাদের সেখানে আটকে রেখেছে। তৃতীয় ছবিটিতে রয়েছে ভেলায় চড়ে নদীপথে বাংলাদেশে ফিরে আসা একদল রোহিঙ্গা।
পনির হোসেন জানিয়েছেন, ছবিগুলো তোলার সময় তিনি স্বাভাবিক ছিলেন। কিন্তু পরে এডিটিং করার সময় সেই দুর্দশার ছবি দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তিনি। আরও বলেন, “মানুষের কষ্ট যে কত রকম এটা রোহিঙ্গা ইস্যু যদি কভার না করতাম তাহলে সম্ভবত আমি বিষয়টা বুঝতাম না।”
পনির চট্টগ্রামের খাজা আজমেরি হাইস্কুল থেকে এসএসসি সম্পন্ন করে এইচএসসি পড়েছেন ঢাকা সিটি কলেজে। তারপর নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করে ফিলিপাইনের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিজ্যুয়াল জার্নালিজমের ওপর উচ্চশিক্ষা নেন। ২০১০ সাল থেকে পনির হোসেন ছবি তুলতেন সখের বসে। সেই শখই একদিন তার পেশা হয়ে দাঁড়ায়। শুরুতে তিনি ফ্রিল্যান্সার হিসেব কাজ করতেন। ২০১৫ সালে তিনি রয়টার্সে যোগদান করেন।
ছবি সৌজন্যেঃ Mohammad Ponir Hossain Facebook
Facebook Comments