বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন। ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্থানীয় সময় বুধবার পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেনে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব হলে আয়োজিত ‘ডায়লগ উইথ জার্নালিস্ট শীর্ষক’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
এই সময় রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বাংলাদেশে তার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, বহু সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাদের ওপর চাপ ও ঝুঁকির কথা ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন আমাদেরকে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের সূচকে বাংলাদেশের ১৫০তম অবস্থান উল্লেখ করে ডিকসন বলেন, এটা অনাকাক্ষিত। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য গ্লোবাল কনফারেন্স অন প্রেস ফ্রিডমে আলোচিত হবে। বাংলাদেশ ব্রিটেনের সম্পর্ক নিয়ে রবার্ট ডিকসন বলেছেন, আগামী ২০২১ সালে ব্রিটেন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে ব্রিটেন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে নতুন করে ঝালাই করে এর ভীতকে আরো শক্তিশালী করতে চায়। আর এই সম্পর্কের অর্ধশতাব্দী উদযাপনের জন্য ব্রিটিশ ফরেন অফিস দুই দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায় ছাড়াও ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির সক্রিয় ভূমিকা আশা করেন। হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির প্রশংসা করে বলেন, ১৫ বছরে এই সাফল্য যথার্থভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না। দেশটি নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। এক দেশের সাথে আরেক দেশের পার্টনারশিপেও কিছুটা ব্যবধান থাকে, ছোট-বড় ইস্যু থাকে। আমার অগ্রাধিকার হচ্ছে বাংলাদেশের সাথে ব্রিটেনের পার্টনারশিপের ক্ষেত্রে সমতা আনা। বাংলাদেশের সাথে ব্রিটেনের বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে রপ্তানির পরিমাণ ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন পাউন্ড। অন্যদিকে বাংলাদেশে ব্রিটেনের রপ্তানির হচ্ছে প্রায় চারশ মিলিয়ন পাউন্ড। এক্ষেত্রে সমতা ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বাংলাদেশে গুম-খুন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন, মনবাধিকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে করা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সবকিছুতেই যথার্থ নীতি চাই। সুশাসন চাই। বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্রিটিশ ফরেন অফিসের ভ্রমণ সতর্কতা জারির ক্ষেত্রে নেতিবাচক মন্তব্যের ব্যাপারেও কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। ভিসা প্রসেসিং ব্যবস্থা দিল্লিতে স্থানান্তর ও ভিসা প্রদানে হয়রানি ও বৈষম্য নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হন হাইকমিশনার। তিনি জানান, প্রাপ্ত আবেদনের শতকরা ৭০ ভাগ ভিসা ইস্যু করছেন। দিল্লিতে ভিসা প্রসেসিং কার্যক্রম চললেও এতে ভারতীয়দের কোনো হাত নেই। সেখানে অবস্থিত ব্রিটিশ কর্মকর্তারাই সিদ্ধান্ত নেন। ভিসা অফিস ঢাকা ফিরিয়ে আনার কোনো সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা হলে ভিসার খরচ বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান ও যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দীনকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বা ব্যক্তিবিশেষ কাউকে নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন না বলে জানান তিনি।
হাইকমিশনার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি ।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তিনি জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ উদার ও অনন্য ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে ব্রিটেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির প্রত্যাবর্তনের পক্ষে, তবে এটি যেনো হয় স্বেচ্ছায় এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত সাপেক্ষে।
হাইকমিশনার জানান, ব্রিটেন মনে করে আরাকান এখনো নিরাপদ নয়। সামগ্রিকভাবে সবসময়ই বার্মার ভূমিকার নিন্দা জানাচ্ছে ইউকে।
ছবি সংগৃহিত
Facebook Comments