চলমান এক মহামারির মধ্যেই ফের আরেক মহামারি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে করোনা ভাইরাস মহামারি। আর সম্প্রতি আফ্রিকার বাইরে প্রায় দুই ডজন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রামক রোগ মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, মাঙ্কিপক্সের এই প্রাদুর্ভাব মহামারিতে রূপ নেবে না। আর তাই আপাতত ডব্লিউএইচও এ বিষয়ে উদ্বিগ্নও নয়।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ডব্লিউএইচও’র মাঙ্কিপক্স বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, তিনি এমন আশা করেন না যে এখন পর্যন্ত পাওয়া শত শত রোগী থেকে এটি আরেকটি মহামারিতে পরিণত হতে পারে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, রোগটি সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে। এর মধ্যে রোগটি আসলে ঠিক কীভাবে ছড়ায় এবং কয়েক দশক ধরে গুটিবসন্তের গণটিকা কার্যক্রম বন্ধ রাখায় মাঙ্কিপক্সের বিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা সে বিষয়গুলোও রয়েছে।
সোমবার এক উন্মুক্ত সভায় ডব্লিউএইচও’র ড. রোসামুন্ড লুইস বলেন, ১২টিরও বেশি দেশে যেসব রোগী পাওয়া গেছে তাদের বেশিরভাগই সমকামী, উভকামী বা এমন পুরুষ যারা অন্য পুরুষদের সঙ্গে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছেন। তাই এই বিষয়ে জোর দেওয়া খুবই প্রয়োজন যেন বিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা করতে পারেন এবং ঝুঁকিতে থাকা মানুষজন সতর্ক হতে পারে। লুইস মাঙ্কিপক্স বিষয়ে ডব্লিউএইচও’র টেকনিক্যাল লিডার। তিনি বলেন, এটি ব্যাখ্যা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে সংক্রমণের মাধ্যম বৃদ্ধি পেয়েছে, যেই বিষয়টা এর আগে পুরোপুরি লক্ষ্য করা হয়নি। তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে, কারো যৌনচাহিদা যাই হোক না কেন, যে কেউই সম্ভাব্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
অন্যান্য বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন, এটা একটা কাকতালীয় বিষয়ও হতে পারে যে রোগটি শুরুতে সমকামী ও উভকামী পুরুষদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা বলেন, দ্রুত রোধ করা না হলে রোগটি দ্রুতই অন্যান্য গোষ্ঠীর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত আগে মাঙ্কিপক্সের রোগী ছিল না এমন ২৩টি দেশে আড়াই শতাধিক রোগীর খবর জানা গেছে। লুইস বলেন, এটা এখনও স্পষ্ট নয় যে মাঙ্কিপক্স যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে ছড়াচ্ছে নাকি যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শুধু সংস্পর্শের মাধ্যমেই ছড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষদের জন্য এর ঝুঁকিকে ‘কম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
এর আগে সংস্থাটি জানিয়েছিল, গত ২৬ মে পর্যন্ত মাঙ্কিপক্স ভাইরাস ডব্লিউইচও’র ২৩টি সদস্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব দেশ ও অঞ্চলে মোট ২৫৭ জন মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং প্রায় ১২০ জন সন্দেহভাজন রোগীর তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ‘মাঙ্কিপক্স’ মূলত গুটিবসন্ত বা চিকেনপক্স গোত্রেরই রোগ। তবে, এটি গুটিবসন্তের থেকে কম মারাত্মক, মৃত্যুর হার ৪ শতাংশেরও নিচে। বেশিরভাগ রোগীই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে, এর আগে কখনও আফ্রিকার বাইরে মহামারি আকারে এই রোগ ছড়াতে দেখা যায়নি। মূলত একজন অন্যজনের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে বিশেষ করে ত্বক থেকে ত্বকের সংস্পর্শে এলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও এখনও পর্যন্ত যারা মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সংক্রমণ বা উপসর্গগুলো সাধারণত বেশ মৃদু।
উল্লেখ্য, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে সহজে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা নেই এবং অসুস্থতা সাধারণত হালকা হয়। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে, ভাইরাসে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠেন।
Facebook Comments