হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি । বুধবার এই অনুরোধ করেন অভিষেক। এছাড়াও, ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বিচারপতি অমৃতা সিংয়ের বেঞ্চ থেকে মামলাটি সরানোর অনুরোধ করেছিলেন।
অভিষেক আবেদনে বলেছেন, বিচারাধীন মামলা নিয়ে আদালতের বাইরে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টে তৃণমূল সাংসদের আর্জি, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এ ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দিতে হবে।
অভিষেক তার আবেদনে বলেছেন, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠনের নির্দেশ দেওয়া হোক। ওই বেঞ্চে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে। আসলে, যে মামলাগুলি বিচারপতি সিংয়ের বেঞ্চে, সেগুলি সেই বিশেষ বেঞ্চে যায়। এ ছাড়া অভিষেক দাবি করেছেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে আদালতের বাইরে বারবার একতরফা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হোক।
আসলে, কয়েকদিন আগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় অভিষেকের সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সাংবাদিকদের সামনে বিচারক প্রশ্ন করেন নেতা হিসেবে অভিষেকের সম্পদের উৎস কী? সংসদ সদস্যরা কি তাদের সম্পদের হিসাব দেবেন, তারা কি তাদের সম্পদের হিসাব সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করবেন- এসব ছিল বিচারকের মন্তব্য। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা দেখতে চাই কার কত সম্পত্তি আছে। কার কত সম্পত্তি আছে? কার সম্পদের উৎস কী?”
এরপর বিচারক বাম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের উদাহরণ দেন। তাঁর কথায়, “যদি অভিষেক সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন, আমি তাঁর সমসাময়িক নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বা অন্য নেতাদের কাছে একই আবেদন করব। আমরা চাই তারা সম্পত্তির হলফনামাও প্রস্তুত করুক এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করুক।
উপরন্তু, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সন্দেশখালিকান্দে মামলায় প্রকাশ্যে রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের সমালোচনা করেছিলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সন্দেশখালীতে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে অভিযানে আহত ইডি কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করতে হাসপাতালে যান। সেখান থেকে যাওয়ার পর তিনি বলেন, “আমি ইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তারপরও বললাম, সুপ্রিম কোর্টের দুর্নীতির তদন্ত রুখতে রাজ্য সরকার কত টাকা খরচ করেছে? তারা কি পরিমাণ বলবেন? কারণ আমি উত্তর জানতে চাই। যদি না হয়, আমি অন্য উপায় খুঁজে বের করব। আজও মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে চাই। এরপর আমি আনুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞাসা করব দুর্নীতির তদন্ত বন্ধে কত টাকা খরচ হয়েছে? সে যদি আমার বিরুদ্ধে চিঠি লেখে, তাকে লিখতে দেবেন না। পরে বিচারক অন্যত্র মন্তব্য করেন, “আমরা সবাই বুঝি তিনি কী ধরনের রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, কী ধরনের প্রশাসন চালাচ্ছেন। দেখা যাক তারা কতক্ষণ স্থায়ী হয়। আর কতদিন তারা আইনের আড়ালে পালাতে পারবে!”
প্রসঙ্গত, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণের দাবি জানিয়ে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে একটি চিঠি জমা দেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় হাইকোর্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিচারক বলেন, ‘তাদের অসুবিধা হলো, আমার নানা কাজের কারণে তাদের বিভিন্ন চোর জেলে আছে। আরও কয়েকজন জেলে যাবে। এজন্য আমার খুব রাগ হয়।
‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মন্তব্য করার জন্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানিয়ে অভিষেকের আবেদন এখন সুপ্রিম কোর্টে। তিনি সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদনও করেছেন যে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যেন কোনো বিচারাধীন মামলায় মন্তব্য না করেন।
Facebook Comments