বিধানসভায় হাতাহাতির জেরে বরখাস্ত বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী, সহ ৫ বিজেপি বিধায়ক। বরখাস্ত হওয়া বিধায়করা হলেন, মনোজ টিগ্গা, নরহরি মাহতো, দীপক বর্মণ এবং শঙ্কর ঘোষ। এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের চিফ হুইপ নির্মল ঘোষ বিধানসভায় প্রস্তাব আনতে গিয়ে বলেন, ‘বিধানসভার মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর উসকানিতে বিধানসভায় তাণ্ডব চালানো হচ্ছে।’ মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘তাদের বরখাস্ত করা উচিত্। বিধানসভার স্পিকার বিমান ব্যানার্জী বলেন, বিধানসভার মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। সম্পত্তি ক্ষতির জন্য হিসাব করা হবে। এরপর তাদের সংসদের কার্যক্রম থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।’
উল্লেখ্য, বগটুই গণহত্যা সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিধানসভায় বিরোধী দলের বিধায়কদের উপেক্ষা করার অভিযোগে, রাজ্যের শাসক দল ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
সোমবার সকালে বিধানসভার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে, বিজেপি বিধায়করা অভিযোগ করেন যে, শাসক দল বিধানসভা অধিবেশন উপেক্ষা করছে। অধিবেশনের শুরুতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন যে, মুখ্যমন্ত্রী অধিবেশনের বাইরে সিট গঠন থেকে ক্ষতিপূরণের সমস্ত ঘোষণা করেছেন, তবে বিধানসভা সম্পর্কে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি।
এরপরই বিজেপি বিধায়করা তুমুল হইচই শুরু করেন। এরপর বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আপনি সমস্যা তৈরি করেছেন। স্লোগান দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। পুলিশের বাজেটে আপনি উপস্থিত ছিলেন না। সেখানে কিছু উত্থাপন করেনি এবং কেবল কার্যধারায় বাধা দেন।” স্পিকারের এই বক্তব্যের পর বিজেপি বিধায়কেরা ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ করেন এবং জোরগলায় স্লোগান দিতে থাকেন।
বিজেপি বিধায়কদের স্লোগান দেওয়ার পরে, টিএমসি বিধায়করাও ওয়েলে নেমে পড়লে পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলেও অশান্তি এড়ানো যায়নি। এইসবের মাঝেই বিধায়ক নরহরি মাহাতো পড়ে যান। বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গার জামা ছিঁড়ে, তাকে আক্রমণ করার অভিযোগও উঠেছে।
জানা গিয়েছে, এই সংঘর্ষের জেরে মনোজ টিগ্গার জামাকাপড় ছেঁড়ার পাশাপাশি অনেক বিধায়কের চশমা ভেঙে গিয়েছে। চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের নাক ফেটেছে। এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে। তিনি এর জন্য শুভেন্দু অধিকারীকে কাঠগড়ায় তুলেছেন।
বিজেপির কেন্দ্রীয় ইনচার্জ অমিত মালভিয়া ট্যুইট করেন, “পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তুমুল হইচই হয়েছে। বাংলার রাজ্যপালের পরে, টিএমসি বিধায়করা এখন চীফ হুইপ মনোজ টিগ্গা সহ বিজেপি বিধায়কদের আক্রমণ করেছে, কারণ তারা হাউসের মেঝেতে রামপুরহাট গণহত্যা নিয়ে আলোচনার দাবী করছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী লুকাতে চান?”
এদিকে, বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা এবং অন্যান্য মহিলা বিধায়করা, বিধানসভার নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে মিলে বিজেপি বিধায়কদের ওপর হামলা চালায়। বিধানসভা দলের হুইপ মনোজ টিগ্গার কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং বিধায়ক নরহরি মাহাতোকে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
বিধায়ক বাণী চন্দনা বাউরি দাবী করেছেন যে, তার পিঠে আক্রমণ করা হয়েছে, অন্যদিকে শিখা মিত্র বলেন যে, তাকেও চড় মারা হয়েছে। বিজেপির সাংগঠনিক সাধারণ মন্ত্রী বিএল সন্তোষের অভিযোগ, বাংলার রাজনীতি এখন পতনের শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্রমাগত পতন হচ্ছে। আজ মনোজ টিগ্গা এবং অন্যান্য বিধায়কদের উপর টিএমসি বিধায়করা আক্রমণ করেছেন।’
Facebook Comments