গতকাল সন্ধ্যায় দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে জয়ী নরেন্দ্র মোদি। সন্ধ্যা ৭টায় রাইসিনা হিলসে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাকে শপথ পাঠ করান। তার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তবে মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যাননি পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানর্জি। প্রথমে যাওয়ার কথা জানালেও পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি।
এই নিয়ে জোর জল্পনা ও সমলোচনায় সরগরম হয়ে উঠেছে ভারতের রাজনীতির মাঠ। এবার সেই সমালোচনার আগুনে ঘি ঢাললেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
মেদিনীপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘নির্বাচন চলাকালীন তৃণমূল কর্মীদের হাতে খুন হওয়া বিজেপি কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের চোখে চোখ রাখতে পারবেন না মমতা। সেই সাহস তার নেই। তাই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাননি তিনি। ’দিলীপ আরও কটাক্ষ করে বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দিতেও ভয় পান মমতা। সেই খুনের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি পাশ কেটে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারবেন না। সেই কারণেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলেন না দিদি।’
মমতার সমালোচনায় সরব হয়েছেন শিবসেনাও। মোদির শপথ অনুষ্ঠানে মমতার অনুপস্থিতি বিষয়ে এনডিএর এই শরিক দল থেকে বলা হয়েছে, ‘নরেন্দ্র মোদি আবারও ক্ষমতায় গেলে দেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে এমনটা বারবারই বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ মোদি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে শপথ গ্রহণ করছেন। এটাই মমতার সহ্য হয়নি। তিনি আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছেন।’
শপথে মমতার না আসার যুক্তির বিষয়ে শিবসেনার বক্তব্য, ‘মমতা যেসব যুক্তি দেখিয়ে শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন তা ভিত্তিহীন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে নির্বাচনে সন্ত্রাস হয়েছিল। আর ওই সন্ত্রাসের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে বলে মমতা আসেননি। এসব মানুষ ভারতীয়, বাংলাদেশের নয়। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার অধিকার তাদের আছে।মমতা অনুষ্ঠানে না এসে নির্বাচনী সংহিংসতায় নিহতদের একরকম অসসম্মানই করলেন। ’
প্রসঙ্গত ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণাকালে মোদির সঙ্গে মমতার তীব্র কথার লড়াই হয়েছিল। এ লড়াইয়ে কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি। তবে নির্বাচনের পর দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের নির্বাচিত লোকসভা সদস্যদের প্রথম বৈঠকে মোদি জানিয়েছিলেন, প্রচারে কে কী বলেছিলেন সেগুলো মনে না রেখে সবাইকে নিয়ে উন্নয়নের পথে হাঁটতে চান তিনি।
মোদির ওই আহ্বানের প্রতি সৌজন্য দেখিয়ে ও রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মমতা।
কিন্তু গত বুধবার হঠাৎই সিদ্ধান্ত বদল করেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। সেদিন এক টুইটে শপথ অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘অভিনন্দন, নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জি। আমার পরিকল্পনা ছিল ‘সাংবিধানিক আমন্ত্রণ’ গ্রহণ করা এবং শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা। যাই হোক, গত এক ঘণ্টায়, আমি গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখছিলাম যে বিজেপি দাবি করেছে বাংলায় রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫৪ জন নিহত হয়েছেন। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাংলায় কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। ওই সব হত্যাকাণ্ড ব্যক্তিগত শত্রুতা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা অন্য কোনো বিরোধের কারণে হয়ে থাকতে পারে। এর কোনোটির সঙ্গেই রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।’
এরপর তিনি লেখেন, ‘তাই, আমি দুঃখিত, নরেন্দ্র মোদি জি, অনুষ্ঠানে না থাকতে এটি আমাকে বাধ্য করল।’।
মমতার এমন টুইটের পর পশ্চিমবঙ্গে ‘খুন হওয়া’ ৫৪ জন বিজেপি কর্মীর পরিবারকে শপথ অনুষ্ঠানে রাখার বিজেপির পরিকল্পনার কারণেই মমতা সিদ্ধান্ত বদলেছেন।
ছবি সংগৃহীত
Facebook Comments