শুরু থেকে দাপট দেখালেও মাঝখানে এবং একদম অন্তিম মুহূর্তে ইতালির সমর্থকদের ভয় পাইয়ে দিয়েছিল অস্ট্রিয়া। এমনকি শেষদিকে প্রায় ভুলে যেতে বসা গোল হজমের তেতো স্বাদও পেয়েছে ইতালি। তবে শেষ পর্যন্ত অবশ্য কোনো অঘটন ঘটেনি। অতিরিক্ত সময়ের দুই গোলে অস্ট্রিয়ার হার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ৮২ বছর পুরনো একটি রেকর্ড ভেঙে ইউরো কাপের শেষ আটেও উঠেছে আজ্জুরিরা।
শনিবার লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় ম্যাচে ইতালি ২-১ গোলে জয়ের দেখা পেয়েছে। এটি ইউরোয় মানচিনির দলের টানা চতুর্থ জয়। এর আগে ২০০০ ইউরোয় ইতালি টানা এত ম্যাচ জিতেছিল।
এই নিয়ে টানা ৩১ ম্যাচে অপরাজিত আছে ইতালিয়ানরা। এর আগে ইতালি ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যকার সময়ে ৩০ ম্যাচ অপরাজিত ছিল। ফলে নিজেদের গড়া ৮২ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙেছে টুর্নামেন্টের ফেভারিট দলটি। তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড অবশ্য ব্রাজিল আর স্পেনের দখলে। দুই দলই সমান ৩৫টি ম্যাচ অপরাজিত ছিল। আর্জেন্টিনা ৩১ ম্যাচ জিতেছে। অর্থাৎ আজকের জয়ে আর্জেন্টিনার রেকর্ড স্পর্শ করলো ইতালি।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে ওয়েলসের বিপক্ষে যে দল নামিয়েছিলেন, তার প্রথম একাদশে সাতটি বদল করে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোর লড়াইয়ের দল সাজান মানচিনি। গ্রুপের শেষ ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চকে যাচাই করে নিতে চেয়েছিলেন ইতালির কোচ। অন্যদিকে অস্ট্রিয়া গ্রুপের শেষ ম্যাচের প্রথম একাদশ অপরিবর্তিত রেখেই ইতালির বিপক্ষে দল নামায়।
টানা ৩০ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড সঙ্গী করে নামা ইতালি শুরুতে বেশকিছু সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। ১১ মিনিটের মাথায় স্পিনাজ্জোলার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর ১৪ মিনিটের মাথায় ইনসিগনের শট প্রতিহত করেন অস্ট্রিয়ার গোলরক্ষক। ১৭ মিনিটের মাথায় বারেল্লার শট আটকে দেল অস্ট্রিয়ার গোলরক্ষক বাখমান।
১৮তম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় অস্ট্রিয়া। কিন্তু আর্নাউতোভিচের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর ৩২তম মিনিটে ইমমোবিলের শট পোস্টে প্রতিহত হয়। গোলের সুযোগ হাতছাড়া হয় ইতালির। এরপর বিরতির আগে স্পিনাজ্জোলার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পর লরেঞ্জোর হেডার মাঠের বাইরে চলে যায়। ফলে দাপট দেখালেও প্রথমার্ধে গোলমুখ খুলতে পারেনি ইতালি।
দ্বিতীয়ার্ধে জমাট রক্ষণ কিছুটা উন্মুক্ত করে আক্রমণে ওঠে অস্ট্রিয়া। ৪৯তম মিনিটে অস্ট্রিয়ার আর্নাউতোভিচের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৫২তম মিনিটে অস্ট্রিয়ার আলাবার শট মাঠের মাইরে। ৪ মিনিট পর একই পরিনতি হয় ইতালির বনুচ্চিরও। ৬৫তম মিনিটে সর্বশেষ ১১ ম্যাচে গোল হজম না করা ইতালিকে চমকে দেন অস্ট্রিয়ার আর্নাউতোভিচ। আলাবার পাস থেকে ইতালির জালে বল জড়িয়ে দন আর্নাউতোভিচ। যদিও রেফারি ভিএআরের সাহায্য নিয়ে গোল বাতিল করেন। অফসাইডের আওতায় পড়েছিলেন অস্ট্রিয়ার তারকা।
গোল বাতিলের পর যেন ইতালি দল হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এরপর কিছুক্ষণ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয় দলটি। ৭২ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামা লোকাতেল্লি। যদিও তিনি মাঠের বাইরে বল মেরে বসেন। ৭৩ মিনিটে ইনসাইনের শট মাঠের বাইরে চলে যায়। এরপর ৮৩ মিনিটে ইতালির বেরারদির শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের খেলাও থাকে গোলশূন্য। তবে ভিএআর না ভিএআরের সাহায্য নিয়ে রেফারি গোল বাতিল না করলে এতক্ষণে বড়সড় অঘটনের সাক্ষী থাকত ইউরো ২০২০।
অতিরিক্ত সময়ের খেলা শুরু হতেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ইতালি। অবশেষে বদলি খেলোয়াড় ফেদেরিকো চিয়েসা ইতালিয়ানদের দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে। স্পিনাজ্জোলার পাস থেকে বল মাথা দিয়ে নামিয়ে প্রথমে দারুণ দক্ষতায় অস্ট্রিয়ান ডিফেন্ডার লাইমেরের পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে বাঁ-পায়ের অসাধারণ শটে দূরের পোস্টে পাঠিয়ে দেন চিয়েসা।
অস্ট্রিয়া গোল হজমের পর যেন অনেকটা দমে যায়। আক্রমণগুলো হতে থাকে ছন্নছাড়া। ৯৯তম মিনিটে লাইনারের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ১০৪ মিনিটে ইনসাইনের শট প্রতিহত করেন অস্ট্রিয়া গোলরক্ষক। তবে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের বিরতির ঠিক আগে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মাত্তেও পেসিনা। খেলার একদম শেষদিকে সাসার গোলে ব্যবধান কমিয়ে আনে অস্ট্রিয়া। কিন্তু ততক্ষণে সময় ঘনিয়ে এসেছে। ফলে জয় ছিনিয়ে নেয় ইতালি।
একক আধিপত্য দেখিয়ে ওয়েলসকে বড় ব্যবধানে হারালো ডেনমার্ক। এই জয়ে শেষ আটও নিশ্চিত হয়ে গেল ডেনিশদের। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ষোলোর ম্যাচে শনিবার আমস্টারস্টাম অ্যারেনায় ৪-০ গোলে জিতেছে ডেনমার্ক। এই জয়ে ২০০৪ সালের পর প্রথমবার ইউরোর শেষ আটে পা রাখল ডেনিশরা এ-গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোয় আসা ওয়েলস বি-গ্রুপের দ্বিতীয় দল ডেনমার্কের বিপক্ষে নামে ইতালির কাছে গ্রুপের শেষ ম্যাচে পরাজিত হওয়া একাদশে তিনটি রদবদল নিয়ে। অন্যদিকে গ্রপের শেষ ম্যাচে রাশিয়াকে ৪-১ গোলে হারানো প্রথম একাদশে দু’টি বদল করে ডেনমার্ক।
খেলায় প্রথম আক্রমণ শানায় ডেনমার্ক। অষ্টম মিনিটের মাথায় ওয়েলসের পোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন ডলবার্গ। শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর পাল্টা আক্রমণে দ্বাদশ মিনিটের মাথায় ফের ডেনমার্কের শেষ রক্ষণ ভেদ করার চেষ্টা করেন বেল। যদিও তার বাঁ-পায়ের শট মাঠের বাইরে চলে যায়। ১৮তম মিনিটে জেমসের শট প্রতিহত করেন ড্যানিশ গোলরক্ষক।
ম্যাচের ২৮তম মিনিটে এগিয়ে যায় ডেনমার্ক। ড্যামসগার্ডের পাস থেকে ওয়েলসের জালে বল জড়ান ক্যাসপার ডলবার্গ। হেনরিক লারসেনের পর দ্বিতীয় ডেনিশ ফুটবলার হিসেবে ইউরোর নকআউট পর্বের কোনো ম্যাচে দুই গোল করলেন তিনি। ১৯৯২ আসরে সেমি-ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিলেন লারসেন। ৩২ মিনিটে ডলবার্গের শট প্রতিহত করেন ওয়েলসের গোলরক্ষক ওয়ার্ড।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও আক্রমণাত্মক খেলতে শুরু করে ডেনমার্ক। শুরুতেই ফের গোল করলেন ক্যাসপার ডলবার্গ। ৪৮তম মিনিটের মাথায় ওয়েলসের জালে দ্বিতীয়বার বল জড়ান তিনি। ৫৩তম মিনিটে গোলের চেষ্টায় মরিয়া গ্যারেথ বেল শট নেন ডেনমার্কের পোস্ট লক্ষ্য করে। কিন্তু শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৮১তম মিনিটে ব্রাথওয়েটের শটে ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়ে যায় বল।
৮৮তম মিনিটে জেনসেনের পাস থেকে গোল করে জোয়াকিম মাহলে ব্যবধান ৩-০ করেন। এর ঠিক ২ মিনিট পরে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ওয়েলসের হ্যারি উইলসন। এরপর যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে কর্নেলিউসেক পাস থেকে ওয়েলসের জালে বল জড়ান ব্রাথওয়েট।
Facebook Comments