ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। বাংলাদেশকে এই ক্যাচ মিসের চড়া মাশুল গুণতে হলো মঙ্গলবার; বিশ্বকাপের ৪০তম ম্যাচে! বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের মতো দাপুটে প্রতিপক্ষকে চোখ রাঙাতে হাফ চান্সকেও সুবর্ণ সুযোগ পরিণত করতে হয়। সেখানে রোহিত শর্মারর আপাত সহজ ক্যাচই ফেলে দিলেন তামিম ইকবাল। ৯ রানে জীবন পাওয়া রোহিত সুদে-আসলে বুঝিয়ে দিলেন পাওনা। বাংলাদেশের বোলারদের পিটিয়ে ছাতু করে সেঞ্চুরি করেন। সেই সঙ্গে ভারত পেল রানের পাহাড়।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান করে ভারত। জবাবে টাইগাররা সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান তোলে। হেরে যায় ২৮ রানে। হারলেও বাংলাদেশের হয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন টাইগার পেস অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। ভারতের দেওয়া ৩১৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম এবং সৌম্য সরকার সাবধানী শুরু করেন। এরপরই সেট হয়ে আউট হন তামিম ও সৌম্য। ২২ রানে মোহাম্মদ শামীর বল খোঁচা মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হয়ে যান দেশসেরা তামিম। এরপর হার্দিক পান্ডিয়ার বলে এক্সট্রা কভারে সৌম্যও ধরা পড়লেন অধিনায়ক বিরাট কোহলির হাতে। ৩৮ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ৩৩ রান করেছেন এ ওপেনার। দলীয় ৭৪ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সে চাপ থেকে দলকে উত্তরণের চেষ্টা করেছেন দেশ সেরা দুই ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু দলকে ভরসা দেওয়া মুশফিক লেগ স্পিনার যুবেন্দ্র চাহালের বল সুইপ করতে গিয়ে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ তুলে দেন মোহাম্মদ শামি মুঠোয়। ২৪ রানে ফিরে যান মুশি। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু এক প্রান্তে সাকিব ধরে খেলছিলেন। রানের গতিও সচল রেখেছেন। কিন্তু অন্য প্রান্তে তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। ফিরে গেছেন লিটন দাস; একই পথে হেঁটেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও।
এরপর লিটন-মোসাদ্দেকের দ্রুত বিদায়ের পর ফিরে গেলেন সাকিবও (৬৬)। এক্সট্রা কভারে সহজ ক্যাচ তুলে দেন দিনেশ কার্তিকের হাতে। ৭৪ বলে ৬টি চারের সাহায্যে করেছেন ৬৬ রান। মাত্র ১৭ রানের ব্যবধানে দলের সেরা তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বড় চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে সপ্তম উইকেটে ইনিংস মেরামতের কাজ মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে নিয়ে করছিলেন সাব্বির রহমান। একটা সময় মনে হচ্ছিল এই দুজনের ব্যাট থেকে ভালো সংগ্রহ পাবে বাংলাদেশ। দলকে উপহারও দিয়েছেন প্রথম পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি। কিন্তু দলীয় ২৪৫ রানে বুমরাহর বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান সাব্বির। ৩৬ বলে ৩৬ রান করেছিলেন তিনি। এরপর উইকেটে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। দলের বিপর্যয়ে অধিনায়কের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করেছিল দল। ভুবনেশ্বর কুমারের প্রথম বলে দারুণ একটি ছক্কাও মেরেছিলেন। কিন্তু পরের বলে আরও একটি মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন ম্যাশ। শেষের দিকে দুর্দান্ত লড়াই করে সাইফ ফিফটি তুলে নিলেও তাকে কেউ সঙ্গ দিতে না পারায় হারতে হলো বাংলাদেশকে। ৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন সাইফ। এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি ও লোকেশ রাহুলের ৭৭ রানের সূচনার পর ৯ উইকেটে ৩১৪ রান তোলে ভারত। শেষ দশ ওভারে মাত্র ৬৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছে টাইগার শিবির। তামিম ইকবালের সহজ ক্যাচ মিসে আফসোস হচ্ছে। ইনিংসের পঞ্চম বলে ভারতের সেরা হার্ডহিটার রোহিত শর্মা, যিনি এ বিশ্বকাপেও দুরন্ত ছন্দে ছিলেন। নয় রানে থাকা তারই ক্যাচ ফেলে দিলেন তামিম। নয়তো আরও কম সংগ্রহ গড়তে পারত টিম ইন্ডিয়া।
জীবন পেলে আরও ভয়ঙ্কর হন রোহিত, বাংলাদেশের বিপক্ষেও তাই হলো। লোকেশ রাহুলকে নিয়ে অনায়াসে তিনি গড়েন শতরানের জুটি। ৪৫ বলে রোহিত ও ৫৭ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন রাহুল। অপরদিকে, টাইগার শিবির তখন উইকেটের জন্য হাহাকার করছিল।
৯০ বলে ২৬তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেন রোহিত সাতটি চার ও পাঁচটি ছক্কায়। বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বাধিক চার সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে রোহিত স্পর্শ করেন কুমার সাঙ্গাকারাকে। বাংলাদেশকে অবশেষে ব্রেক থ্রু এনে দেন সৌম্য। ফিরিয়ে দেন ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান রোহিতকে। ৯২ বলে ১০৪ রানে আউট রোহিত। এ বিশ্বকাপে রেকর্ড ১৮০ রানের ওপেনিং জুটি থামে ভারতের।
রোহিতকে ফিরিয়ে টাইগার বোলাররা নিজেদের খুঁজে পায়। পেসার রুবেল প্যাভিলিয়নে পাঠান লোকেশ রাহুলকে। ৯২ বলে ৭৭ রান করেন তিনি ছয় চার ও এক ছক্কায়। এরপর মুস্তাফিজের ডাবল ব্রেক থ্রুতে বিরাট কোহলি ও হারদিক পান্ডিয়াকে আউট করলে স্বস্তি নামে মাশরাফিদের। পঞ্চম উইকেটে দুই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান রিশাভ পান্ত ও মহেন্দ্র সিং ধোনি গড়েন ৪০ রানের জুটি। তবে পান্তকে ৪৮ রানে আউট করেন সাকিব। টাইগারদের হয়ে সবচেয়ে কম খরুচে বোলিং করেন তিনি। দশ ওভারে মাত্র ৪১ রান দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
শেষদিকে দুর্দান্ত বোলিং করেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। দ্রুত ফিরিয়ে দেন দিনেশ কার্তিককে। ইনিংসের পঞ্চাশতম ওভারে মহেন্দ্র সিং ধোনি ৩৩ বলে ৩৫ রানে ফিরে যান। বুমরাহকে আউট করে বিশ্বকাপে স্বপ্নের পাঁচ উইকেট পেলেন মুস্তাফিজ। সাকিবের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে এ কীর্তি মুস্তাফিজের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত : ৩১৪/৯ (৫০ ওভার)
বাংলাদেশ : ২৮৬/১০ (৪৮ ওভার)
ফল : ভারত জয়ী ২৮ রানে
ছবি সংগৃহিত
Facebook Comments