এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এবারের শীতে লক্ষ লক্ষ আফগান নাগরিককে অনাহারে থাকতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। সংস্থাটির বরাতে ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, আফগানিস্তানের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি ২৮ লাখ লোক দ্রুত ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। এছাড়া ৫ বছরের কম বয়সী ৩২ লাখ শিশুও অতি মাত্রায় পুষ্টিহীনতায় ভুগতে পারে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ডব্লিউএফপি সতর্ক করেছিল, কেবল ৫ শতাংশ আফগান পরিবারের কাছে প্রতিদিন খেয়ে বেঁচে থাকার মতো যথেষ্ট খাদ্যের ব্যবস্থা আছে। রান্নার তেল ও গমের মতো প্রাথমিক উপকরণগুলোর দাম আকাশচুম্বী। অক্টোবর মাসে সংস্থাটি আবারও সতর্কবাণী দেয়, ১০ লাখ শিশু ভয়াবহ পর্যায়ের পুষ্টিহীনতার শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে। এখন তাদের জীবন বাঁচাতে শিগগির জরুরি চিকিৎসা সেবা দেওয়া প্রয়োজন।
ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে বিষয়টি নিয়ে জানান, আফগানিস্তান এখন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ আকারের মানবতার সংকটে ভুগতে থাকা দেশের মধ্যে অন্যতম। গেল আগস্ট মাসে মার্কিন সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের পর তালেবান যোদ্ধারা আফগান ভূখণ্ডের দখল নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। বিশ্লেষকদের মতে, তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের দখল নিয়ে নেওয়ায় বিদেশি সাহায্য নির্ভর আফগানিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি দেশটিতে চালু থাকা পশ্চিমা দেশগুলোর সব ত্রাণ প্রকল্পও স্থগিত করে দেওয়া হয়। এছাড়া বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) তাদের অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে ত্রাণ নির্ভর হিসেবে বিবেচনা করা হয় যদি সে দেশের জিডিপির ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি বৈদেশিক ত্রাণ থেকে আসে। আফগানিস্তানের জিডিপির ৪০ শতাংশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক ত্রাণ নির্ভর বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
ডব্লিউএফপি সতর্ক করে বলেছে, আসন্ন শীতের মৌসুমে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল আফগানদের আরও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের শহর অঞ্চলের বাসিন্দারা পল্লী অঞ্চলের বাসিন্দাদের মতো খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানায় ডব্লিউএফপি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পরিচালক কিউ ডংইউ জানান, আফগানিস্তানে জরুরিভিত্তিতে ও কার্যকরভাবে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। শীতে দেশটির বড় একটি অংশ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আগেই কাজটি করতে হবে। সময় মতো উদ্যোগটি গ্রহণ করা না হলে নারী, শিশু, বয়স্ক ও কৃষকসহ লাখো মানুষ প্রচণ্ড শীতের মধ্যে অভুক্ত থাকবেন বলে মত কিউয়ের।
সেপ্টেম্বর মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে আফগান নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়, যার তিনভাগের একভাগ ডব্লিউএফপিকে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ সোমবার (২৫ অক্টোবর) ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রকল্প প্রতিশ্রুত তহবিলের মাত্র এক তৃতীয়াংশ হাতে পেয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগকে সফল করতে তাদের অন্তত মাসিক ২২০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। মূলত খাওয়ার পানির স্বল্পতা এবং ভয়াবহ খরার কারণে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে।
Facebook Comments