উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কুখ্যাত ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ড। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসর শহরে ইংরেজ সেনা ব্রিগেডিয়ার রেগিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। তখন শহরের জালিয়ানওয়ালা বাগ নামক একটি বদ্ধ উদ্যানে সমবেত নিরস্ত্র জনগণের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেছিল ব্রিটিশ সেনারা। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজ সরকারের দেওয়া “নাইট” উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন।
বর্তমানে সময় পরিবর্তন হয়েছে, ভারতবাসীর সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশরাও দলমত নির্বিশেষে নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারের প্রতি ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছিলেন। যাতে এবার সমর্থন জানিয়েছেন ব্রিটিশ এমপিদের অনেকেই। তা সত্ত্বেও জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য আপাতত ক্ষমা চাইতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে নেতৃত্বাধীন সরকার।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওয়েস্ট মিনিস্টার হলে বিষয়টি নিয়ে হাউস অব কমন্সের বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রস্তাব এনেছিলেন কনজারভেটিভ পার্টিরই একজন আইন প্রণেতা। পরে পার্লামেন্টের বেশ কয়েকজন সদস্য এই প্রস্তাবটির বিষয়ে নিজেদের সমর্থন প্রকাশ করেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেছেন, ‘ভারতের কাছে ক্ষমা চাওয়ার সঙ্গে অনেক আর্থিক দায়বদ্ধতাও জড়িত। তাই বিষয়টা অতটা সহজ নয়। এবিষয়ে দুদেশের সরকারের মন্ত্রী এবং শীর্ষ কর্তারা, তাছাড়া নয়াদিল্লির ব্রিটিশ হাইকমিশনার এখনো কাজ করে যাচ্ছে।’
আগামী ১৩ এপ্রিল মর্মান্তিক সেই গণহত্যার শতবর্ষ। ভারতের ব্রিটিশ হাইকমিশনের প্রতিনিধিদের কাছে এরইমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন সেদিন জালিয়ানওয়ালা বাগে গিয়ে শহীদদের সম্মানার্থে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসেন।
মার্ক ফিল্ড বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি লজ্জার অধ্যায়। ব্রিটিশ সরকার ঠিক সময়েই তার নিন্দা করেছিল। এ বারও গভীর শোকের সঙ্গে ব্রিটেনে নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ পালিত করা হবে।’
এদিকে দাবি তো ছিল সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয়দের কাছে ক্ষমা চাওয়া। সে পথে কেন একদমই হাঁটতে নারাজ ব্রিটেন সরকার?
পার্লামেন্ট সূত্রে খবর, ব্রিটিশ পাঠ্যসূচিতে পাঞ্জাবের সেই গণহত্যার ঘটনা অন্তর্ভুক্তি, হতাহতদের উত্তরাধিকারীদের কাছে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ নানা দাবি আজকের এই বিতর্কে ওঠে। অনেকের মতে, মূলত এসব কারণেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মন্ত্রী আর্থিক প্রসঙ্গটি টেনেছেন।
মার্ক ফিল্ড এও বলেছেন, ‘আমি একটু গোঁড়ামনস্ক। ঔপনিবেশিক ইতিহাসের জন্য ক্ষমা চাইতে আমারও একটু অনীহা। তাছাড়া সরকারি দপ্তরের ক্ষমা চাওয়ার সঙ্গে আর্থিক দায়বদ্ধতা চাপতে পারে বলেও আমরা আশঙ্কা করছি।’
Facebook Comments