ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র হাইতিতে আঘাত হানা ৭ দশমিক ২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দুই হাজার ১৮৯ জন ছাড়িয়েছে। দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে এই নিহতের সংখ্যা। তাছাড়া এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সকালে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বেঁচে যাওয়া মানুষরা খাবার, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সংকটে ভুগছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে চোখ রাঙাচ্ছে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ঝড় ‘গ্রেস’ বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। যার প্রভাবে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক বৃষ্টিপাত। ঝড়ে প্রবল বর্ষণে বন্যার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
এ দিকে ভূমিকম্পে অনেক হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেবা দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও হাসপাতালের সামনে তাঁবু নির্মাণের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তারপরও রোগীরা চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
চিকিৎসার জন্য মেয়ের মরদেহ নিয়ে হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লেস কেয়াসের বাসিন্দা লেনেত্তি নুয়েল নেমে এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসার অভাবে আমার মেয়েকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’ এবার একই অভিযোগ করেছেন ২৬ বছর বয়সী দুই সন্তানের এক মা।
শনিবার সকালে হাইতির পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানে ৭ দশমিক ২ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। ভয়াবহ এই কম্পনের পর প্রাথমিকভাবে কয়েকজনের মৃত্যু ও বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। যদিও অল্প সময়ের ব্যবধানে সব হিসেবই পুরোপুরি পাল্টে যায়। দ্রুতই বাড়তে থাকে এই মৃত্যুর সংখ্যা। সেই সঙ্গে নিখোঁজদের তালিকাও দীর্ঘ হতে শুরু করে।
অপর দিকে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে হাইতির প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল হেনরি এরই মধ্যে দেশব্যাপী এক মাসব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। আর তিনি জনগণকে সংহতি দেখানোর জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছিলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে আমরা অধিক পরিমাণে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাচ্ছি। এছাড়া আহতদের মধ্যে যাদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন- আমরা তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছি। আমরা আজ এবং আগামীকাল আরও কিছু লোককে সরিয়ে নেব।
প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল হেনরি আরও বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে যতটা সম্ভব জীবিতদের উদ্ধার করে আনা। আমরা জানতে পেরেছি- স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে লেস কায়েসের হাসপাতালগুলোয় আহত ও হাড়ভাঙা মানুষে ভরে গেছে।
অন্য দিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্প্রদায় ভয়াবহ এই দুর্যোগটির ফলে দ্বীপরাষ্ট্র হাইতিকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শনিবার সকালে ক্যারিবীয় দ্বীপপূঞ্জজুড়ে ভয়ঙ্কর ভূকম্পন অনুভূত হয়। এতে ভবন ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় লোকজন নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর ক্যারিবীয় অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, হাইতির পেটিট ট্রুও ডি নিপ্পেস থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে ৭ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অব-প্রিন্স থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
বিশ্লেষকদের মতে, এবারের ভূমিকম্পটি ১১ বছর আগে হাইতিতে আঘাত হানা ৭ মাত্রার কম্পনের চেয়েও শক্তিশালী এবং অগভীর। ২০১১ সালের ওই ভূমিকম্পে অঞ্চলটিতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আর ভেঙে পড়েছিল অসংখ্য বাড়িঘর ও ভবন। তাছাড়া বহু মানুষ এরই মধ্যে গৃহহীন হয়ে আছেন।
Facebook Comments