ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে আমেরিকার বিরুদ্ধে রাশিয়ার অভিযোগ। রাশিয়া বলেছে, আমেরিকা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।
আসলে, পান্নু মামলায় ভারতের বিরুদ্ধে আমেরিকার অভিযোগ নিয়ে বুধবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে জাখারোভা বলেন, ভিত্তিহীন অভিযোগ করে আমেরিকা ভারতকে অপমান করছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ভারত জড়িত ছিল, এমন কোনো প্রমাণ আমেরিকা এখনো পেশ করতে পারেনি। এছাড়া ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগও আমেরিকার দুর্বল বোঝাপড়ার প্রমাণ দেয়। ভারত।”
#BREAKING: Russia rubbishes United States blaming India for assassination attempt of Khalistani terrorist Gurpatwant Singh Pannun. Russian Spokesperson Maria Zakharova says US has shared no evidence against India. Russia accuses US of interfering in internal affairs of India. pic.twitter.com/zsfpvHOGlm
— Aditya Raj Kaul (@AdityaRajKaul) May 8, 2024
রাশিয়া বলেছে, “আমেরিকা এই ধরনের অভিযোগ করে ভারতকে একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে অপমান করছে। আমেরিকা শুধু ভারতের বিরুদ্ধে নয়, আরও অনেক দেশের বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে। তাদের এই পদক্ষেপ স্পষ্টতই ভারতের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ হুমকি।” মামলায় হস্তক্ষেপের প্রমাণ।”
আমেরিকা এর আগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নির্বাচন না করার অভিযোগ এনেছে। প্রকৃতপক্ষে, রাশিয়ায় 15-17 মার্চের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে ৮৮% ভোট পেয়ে ৫ম বারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন পুতিন। এ নিয়ে আমেরিকার অভিযোগ ছিল, পুতিন কোনো বিরোধী নেতাকে দেশে টিকে থাকতে দেন না। রাশিয়ায় কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না।
আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলো তাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ করে আসছে? 2021 সালে, একটি মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে পুতিন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লাভবান করার জন্য মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার জন্য অপারেশন অনুমোদন করেছিলেন। এর আগে ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগও উঠেছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে বিডেন পুতিনকে খুনি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছিলেন যে তিনি যে সব অন্যায় করেছেন তা শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। এর জন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। আমেরিকার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে রাশিয়া সেখান থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেছে।
এছাড়া নির্বাচনে চীনের হস্তক্ষেপের অভিযোগও করেছে আমেরিকা। সম্প্রতি চীন সফরে আসা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন যে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আশ্বাস সত্ত্বেও মার্কিন নির্বাচনে চীনা হস্তক্ষেপের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে একটি বৈধকরণ পাস করেছে। বলা হয়েছিল যে চীনা সংস্থা টিকটক বিক্রি না করলে, অ্যাপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হবে। আমেরিকার নির্বাচনে চীনের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এসবের মধ্যেই ভারতের নির্বাচনে আমেরিকার হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে পশ্চিমা দেশগুলোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইছে রাশিয়া। আসলে, ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে, আমেরিকা ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং বৈষম্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন জারি করেছিল। একই সঙ্গে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
গত বছরের নভেম্বরে আমেরিকা নিউইয়র্কে খালিস্তানি সন্ত্রাসী গুরপতবন্ত সিং পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্রের জন্য ভারতকে অভিযুক্ত করেছিল। তবে এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয় আমেরিকা। এর পর গত ২৯ নভেম্বর নিউইয়র্ক পুলিশের এই মামলার চার্জশিট প্রকাশিত হয়।
এতে ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তার নাম ছিল। অভিযোগপত্রে লেখা ছিল- প্রধানমন্ত্রী মোদির আমেরিকা সফরে পান্নুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর পরিকল্পনা করেছিলেন ভারতের একজন প্রাক্তন সিআরপিএফ অফিসার। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর, আমেরিকা বিষয়টির তদন্তে সহযোগিতার জন্য ভারতের কাছে ক্রমাগত আবেদন করেছে। ভারত আমেরিকার অভিযোগকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছে।
সম্প্রতি মার্কিন মিডিয়া হাউস ওয়াশিংটন পোস্ট দাবি করেছিল যে ভারতীয় তদন্ত সংস্থা RAW (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং) খালিস্তানি সন্ত্রাসী গুরপতবন্ত সিং পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পান্নু হত্যার পুরো পরিকল্পনা করেছিলেন RAW-এর একজন সিনিয়র অফিসার বিক্রম যাদব। ভারতও এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
Facebook Comments