দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র ব্রুনাইয়ের সরকার গোটা দেশে ইসলামি শরীয়াহর ভিত্তিতে নতুন আইন প্রয়োগ করতে যাচ্ছে। যেখানে সমকামিতা, ধর্ষণ এবং হযরত মোহাম্মদকে অবমাননার মতো অপরাধকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। সরকারের নতুন এই আইনে ধর্ষণ, ব্যভিচার, ডাকাতি, ব্যবচ্ছেদ এবং নবী মোহাম্মদ এর প্রতি অবমাননা ও মানহানির অপরাধে শাস্তি স্বরূপ পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে নতুন এই শরীয়াহ আইনে চুরির শাস্তি হিসেবে অঙ্গচ্ছেদের কোথাও উল্লেখ আছে। তাছাড়া গর্ভপাতের জন্য শাস্তি হবে চুরির মতোই অঙ্গচ্ছেদ।
আইনে ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো মুসলমান শিশুদের ইসলাম ছাড়া অন্য যেকোনো ধর্মের শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্ররোচিত কিংবা উৎসাহিত করাটাকে সম্পূর্ণ অপরাধমূলক দণ্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এই আইন কেবল মাত্র মুসলমানদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে; তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অমুসলিমদের জন্যও প্রয়োগ করা হবে এই আইনের ধারা।
বুধবার (৩ এপ্রিল) তেলসমৃদ্ধ এই দেশটির রাজধানী বান্দর সেরি বেগ ওয়ানের কাছে একটি কনভেনশন সেন্টারে সুলতান হাসান আল-বলখাই জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দেন।
সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি এই দেশে ইসলামিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে চাই। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে ব্রুনাই সেই দেশ… যেখানে সর্বদা আল্লাহর কাছে উপাসনা করা হয়।’
সুলতান হাসান আল-বলখাই আরও বলেন, ‘আমি মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই যে, তারা কেবল মসজিদগুলোতেই নয়, তাদের ইসলামী কর্তব্যের অংশ হিসেবে সমাজের সকল শ্রেণীর লোকদের দিনের দাওয়াত দিতে হবে।’ তিনি এও বলেছেন, ‘আমি এই দেশকে এমন একটি দেশে রূপান্তর করতে চাই যে দেশ কেবল “ন্যায্য ও সুখীদের” মধ্যে থাকবে। যাতে কেউ এই দেশে আসলে একটি মিষ্টি অভিজ্ঞতা পায়। আমাদের দেশে এলে তারা নিরাপদ এবং সুসংগত পরিবেশ উপভোগ করবে। ’যদিও সরকার প্রধানের এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আইনটি বাস্তবায়নের বিষয়ে ভীষণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, এই আইনটি বাস্তবায়িত হলে দেশটিতে মানুষের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে।
২০১৪ সালে দেশটি প্রথম শরীয়াহ আইনের চালু করা হয়। ব্রুনাইয়ে তখন থেকেই সাধারণ এবং শরীয়াহ এই দুই ধরনের আইনই বহাল রাখা হয়। এর আগে ২০১৩ সালে সুলতান শাসিত এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে প্রথম এই সংক্রান্ত একটি কোডের ঘোষণা করা হয়েছিল। আর সে সময় থেকে মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশটিতে পর্যায়ক্রমে জরিমানার বিধান করা হয়। যা বর্তমানে নতুন আইন তৈরির মাধ্যমে পুনঃ সংশোধিত হলো।
এতে সম-লিঙ্গের মধ্যে যৌন সম্পর্কের শাস্তির জন্য একসঙ্গে চারজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর প্রয়োজন হবে। দেশটিতে আগে থেকেই সমকামিতাকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। যেখানে সমকামিতার জন্য শাস্তি করা হয়েছিল ১০ বছরের কারাদণ্ড।
এদিকে ব্রুনাইয়ের সমকামী গোষ্ঠী সরকারের এমন সিদ্ধান্তের জন্য ভীষণ ভীত এবং হতাশা প্রকাশ করেন। এমনকি তারা এটিকে ‘মধ্যযুগীয় শাস্তি’ বলেও উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া ব্রুনাই সরকারের এমন ঘোষণার পর হলিউড তারকা জর্জ ক্লুনিসহ অনেক তারকাই সুলতানের মালিকানাধীন বিভিন্ন বিলাস বহুল হোটেলকে ইতোমধ্যে বয়কটের করেছেন। তারা এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
সংগৃহিত চিত্র
Facebook Comments