তন্বী রায়, কলকাতা : দুর্গাপূজা বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব। মা দুগ্গার মতো অনেকের কাছেই সময়টা ঘরে ফেরার। চেনা পরিচিত মুখগুলোর সারাবছরের অপেক্ষার অবসানের প্রতীক এই দুর্গাপূজা। আর তাই এই পূজা বাঙালীর ঘরে ঘরে বয়ে আনে খুশির হাওয়া, আনন্দের জোয়ার।
পেটুক বাঙালীর ফেরা মানেই শুরু হয় আরেক উৎসব যার নাম পেটপুজো উৎসব। সকাল থেকেই হেঁশেল হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র। তখন বাড়ির কর্ত্তীই হাতাখুন্তি নিয়ে হয়ে ওঠে দশভূজা তবে কোনো দুষ্টমনের উদ্দেশ্যে নয় বরং নতুন সৃষ্টির প্রচেষ্টায় যা বাড়ির সকলের মন জয় করতে সক্ষম।
তবে আজকে অতি ব্যস্ত জীবনে পুজোর কদিন ছুটিতে কেউ আর হেঁশেলে সময় কাটাতে ইচ্ছুক নন। সবাই চান কয়েকটা দিনের বিশ্রাম। কিন্তু বিশ্রাম করলে পেট চলবেই বা কিভাবে? আর যাহোক কিছু খেয়ে পেট ভরালেই তো হলনা, বাঙালীর রসনাতৃপ্তির উপায় তো চাই। পুজোর ছুটির কয়েকদিন সবাই মিলে ভালোমন্দ খাওয়ার জন্যই কলকাতার বেশ কিছু নামীদামী রেস্তোরাঁ নিয়ে এসেছে পুজো স্পেশাল মেনুর সম্ভার।
আসুন দেখে নেওয়া যাক।
১) নিউটাউন রাজারহাটের প্রাইড হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে রয়েছে ক্যাফে ট্রীট। সেখানে পুজো উপলক্ষে রয়েছে পুজো স্পেশাল বুফে। মধ্যাহ্নভোজ হোক বা রাতের ডিনার, রকমারি বাঙালী খাবার নিয়ে হাজির তারা সতেজ রঙবেরঙের ককটেল।রয়েছে মোচার চপ, গন্ধরাজ মাছ ভাজা, মাছের ডিমের বড়া, ফাউল কাটলেট, বকফুল ভাজা, স্যালাড, কচুড়ি, রাধাবল্লবী, পোলাও, ভাঙরমাছের ঝালবাটনা, নারকেল বাটা মাংস, চিংড়িমাছের মালাইকারি, পাবদার ঝাল আরোও অনেক কিছু। শেষে রয়েছে আমসত্ত্ব খেজুরের চাটনী বা প্লাস্টিক চাটনী আর হরেকরকম মিষ্টি যেমন ভাপা সন্দেশ, কালোজাম, কমলপুলি, সীতাভোগ, চিরকুট ইদ্যাদি। খরচ হবে প্রতিজন পিছু ১১০০+ট্যাক্স।
২) এরপর আসা যাক রাজারহাটের চিনারপার্কের পিপল ট্ৰী হোটেলে। তিনতলায় রয়েছে রেস্তোরাঁ নাম তামারা। পুজোর কয়েকটা দিন এখানেও রয়েছে বুফে। রয়েছে অনেকরকম শরবত যেমন আমপান্না বা জলজিরা। এছাড়া স্যুপ, চাট, ফুচকা, নানারকমের বড়া, স্যালাড। মেইন কোর্সে আছে লুচু, কষামাংস, বাসন্তী পোলাও, ভেটকি মাছের রসা, পটলের দোলমা, পাবদা মাছ, চিংড়ি মাছের বিরিয়ানী, তেল কই, গ্রীল্ড চিকেন আরোও অনেককিছু। শেষপাতে রয়েছে চাটনী, পাপর, মিষ্টিদই, রাজভোগ, আইসক্রিম, কাস্টার্ড। খরচ মাথাপিছু ৯৯৯+ট্যাক্স।
৩) রাজারহাটের হাওয়ার্ড জনসন কলকতাও পুজোয় এনেছে রকমারি খাবারদাবার। রয়েছে পুরভরা লঙ্কার পাকোড়া, মখমলি পনীর টিক্কা, ট্যাংরা স্টাইল ড্রাই চিলি চিকেন, চিয়াং মাই ক্রিসপি লটাসরুট, বাদশাহী চিকেন পাকোড়া, ভেজিটেবল কড়াইশুঁটির কাটলেট প্রভৃতি। সাথে আছে নানারকমের স্যালাড এবং চাট ও রকমারী স্যুপ। এরপর রয়েছে ঘি ভাত, সোনা মুগ ডাল, কড়াইশুঁটির কচুড়ি, ধোঁকার ডালনা, চিকেন বিরিয়ানি, চিংড়ি মাছ দিয়ে মোচার ঘন্ট, পাবদার সর্ষে ঝাল, ছানার কোফতা, আলু পোস্ত, ভুনা চিকেন রোস্ট, মাটন ডাকবাংলো। শেষে রয়েছে চাটনী, পাপর, মিষ্টিদই, ছানাপোড়া সন্দেশ, চকোচিপ পেস্ট্রি, সোনপাপরী, ল্যাংচা, আইসক্রিম, পায়েস, বেকড রসগোল্লা এবং মিষ্টিপান। খরচ মাথাপিছু ১০৯৯ টাকা।
৪) এরপর চলুন যাওয়া যাক সল্টলেক চত্বরে। সিটি সেন্টারের কাছেই রয়েছে গোল্ডেন টিউলিপ হোটেল। তারই চতুর্থ তলে রয়েছে অ্যান্টি পাস্তি নামক রেস্তোরাঁ। আপনাকে অভ্যর্থনা করা হবে গন্ধরাজ লেবুর শরবত, ছাঁচ, দইয়ের ঘোল কিংবা আমপোড়ার শরবত দিয়ে। এরপর রয়েছে কুমড়ো ফুলের বড়া, কলমি শাকের বড়া, বেগুনী, তপসে ফ্রাই, মৌরলা মাছের পেঁয়াজী, এঁচোরের চপ। সাথে রয়েছে অনেক রকমের স্যালাড। মেইন কোর্সে রয়েছে বাটি চিংড়ি, লাল শাক ভাজা, লুচি, সোনামুগ ডাল, ধোঁকার ডালনা, মরিচ মাংস, দই মুরগী, মাটন বিরিয়ানি, প্যান ফ্রাইড চিলি চিকেন, হাক্কা নুডলস, চিলি ফিশ আরোও অনেককিছু। এরপর থাকছে আনারস, টমেটো কিংবা মিক্সড ফ্রুট চাটনী, পাপর এবং মিষ্টি। মিষ্টির মধ্যে রয়েছে পটল সন্দেশ, নলেন গুড়ের পায়েস, ম্যাঙ্গো পেস্ট্রি, নবাবী ছানার বড়া, দরবেশ, অমৃতি, ল্যাংচা ইত্যাদি। খরচ মাথাপিছু ৮৯৯ টাকা।
৫) সল্টলেক স্টেডিয়াম এর মধ্যে রয়েছে দ্য স্ট্যাডেল। তারই ফার্স্ট ইনিংস নামক রেস্তোরাঁ নিয়ে এসেছে পুজোর নতুন মেনু। রয়েছে বাঙালি এবং চাইনিজ পদ। শরবতের মধ্যে রয়েছে জল জিরা গন্ধরাজ লেবুর শরবত। তারপর রয়েছে মাছের ডিমের বড়া, গ্রীন পেপার চিকেন, মোচার চপ, আম আদার ভেজিটেবল কাটলেট। রয়েছে নানাবিধ স্যালাড, চাট এবং স্যুপ। মেইন কোর্সে রয়েছে মুক্তমুখী শুক্ত, কড়াইশুঁটি ও ধোকার ডালনা, মুর্শিদাবাদী মাটন কষা, কলকাতা চিকেন বিরিয়ানি, তপসে ভাজা, সেজওয়ান চিকেন, লুচি, ছোলার ডাল, সিঙ্গাপুরী চিকেন ফ্রাইড রাইস, নুডুলস ইত্যাদি। শেষে রয়েছে চাটনী, পাপর, মিষ্টিদই, শাহীটুকরা, আইসক্রিম, বেকড রসগোল্লা। খরচ মাথাপিছু ১৪০০ টাকা।
৬) গড়িয়াহাটে প্যান্টালুন্স এর পেছনেই রয়েছে হোটেল র্যাডিশন। তারই তৃতীয় তলে রয়েছে কে নাইনটিন নামক রেস্তোরাঁ।রয়েছে জলজিরা ও আমপান্নার মতো শরবত, চাট ও স্যালাড কাউন্টার।এরপর রয়েছে দইফুচকা বা টক ঝাল ফুচকা, কুমড়ো ফুল ভাজা, তন্দুরী চিকেন উইংস, আচারী পনির টিক্কা, হাঁসের ডিমের বড়া, লেবু পাতা দিয়ে ফিশ ফিঙ্গার, পালং আর বিউলির ডালের বড়া ও এরকম আরো কিছু পদ। মেইন কোর্সে রয়েছে ভাপা পটল সর্ষে, ছানার কোফতা কারী, আলু ফুলকপির ডালনা, চিটাগঙের প্রন বিরিয়ানি, গোলবাড়ির কষা মাংস, গ্রিল্ড ফিশ উইথ শারমৌলা স্যস, থাই গ্রীন করি উইথ চিকেন, ইন্দোনেশিয়ান ফিশ কারি, হাক্কা নুডলস ইত্যাদি। শেষপাতে রয়েছে প্লাস্টিক চাটনী, আনারসের চাটনী, পাপর ও মিষ্টি যেমন রাজভোগ, মিষ্টিদই, কালাকাঁদ, আইসক্রিম, মালপোয়া, ফ্রেশ ফ্রুটস ইত্যাদি। খরচ মাথাপিছু ১০৯৯ টাকা (মধ্যাহ্নভোজ) এবং ১১৯৯ টাকা (নৈশভোজ)।
এই হোটেলের ছাদে রয়েছে আরেকটি রেস্তোরাঁ যার নাম স্মোক শ্যাক, যেখানে আয়োজন রয়েছে ছাদে বসে আড্ডা দেওয়ার। সাথে রয়েছে চপ, কাটলেট, রোল, ঝালমুড়ি এবং পানীয়র ব্যবস্থা। প্যাকেজ শুরু মাথাপিছু ১২৯৯ টাকা থেকে।
৭) বাঙালী রেস্তোরাঁর মধ্যে পিয়ারলেস ইনের আহেলীর নাম সর্বজনবিদিত। এবছর তারা পালন করছে ২৫তম বর্ষপূর্তি। এই উপলক্ষে তারা নিয়ে এসেছে হারিয়ে যাওয়া ২৫টি বাঙালী পদ। রয়েছে শীতল মধু ডাব, পটল মোচার সংযুক্তি, পটল ভরা ভেটকী, ফুলকপি চিংড়ির ছেঁচকি, সবজি গ্রন্থ, সজনে বড়ি চিংড়ি, নারকেল পটল সর্ষে, আর পটলের ঘন্ট, বেগুন ভেটকির তালমিল, বাটা চিংড়ি মুরগী, পুজো বাড়ির মাংস, ভেটকি নবাবী ঘন্ট, পেঁয়াজকলি চিংড়ি, পেঁয়াজ ডিমের পোস্ত, কচু পাতায় চিংড়ি, পাতুরি পাঁচকাহন, তিল চিংড়ি। শেষে রয়েছে কুলের চাটনী, পাপর, শুভ্র সীতাভোগ, স্তর ভাপা সন্দেশ। খরচ মাথাপিছু ১২৯৯ টাকা+ট্যাক্স।
৮) দ্য ললিত গ্রেট ইস্টার্ন এর অ্যালফ্রেস্কোতেও পুজো উপলক্ষে রয়েছে এলাহী ব্যবস্থা। পানীয়র মধ্যে রয়েছে গন্ধরাজ ঘোল, পোড়া আমের শরবত, তেঁতুলের শরবত, ফ্রুটপাঞ্চ ইত্যাদি। রয়েছে হরেকরকম স্যুপ ও স্যালাডের সম্ভার। এরপর রয়েছে মোচার চপ, ভেটকির পাটিসাপটা, আমসত্ত্ব দিয়ে ছানার চপ, ধনেপাতার বড়া, মাটনের ফুলুরি ইত্যাদি। মেইন কোর্সে রয়েছে চিংড়ি ঝিঙে পোস্ত, আমরা দিয়ে পারশে টক, খুলনার মাছের ঝাল, ফুলকপির পাতুরি, কক্স বাজারের কাঁকড়া ভুনা, শাপলা চিংড়ির ঘন্ট, ময়মনসিংহের লাবড়া, চিকেন পেপার ওয়াইন স্যস, গ্রিল্ড ভেজিটেবলস, সান ড্রাইড টম্যাটো এন্ড পেস্ত ক্রিম লাজানিয়া ইত্যাদি সাথে আছে নানা আচার, মোরব্বা ও রায়তা। শেষপাতে রয়েছে আবার খাবো সন্দেশ, মোহনভোগ, চন্দ্রকলা, বাটার স্টাফড ল্যাংচা, লবঙ্গলতিকা, কেশরী রাজভোগ, মালাই স্যান্ডউইচ, ছানার জীলিপি ও আরোও অনেক কিছু। খরচ মাথাপিছু ২২০০টাকা+ট্যাক্স।
৯) হিন্দুস্তান পার্কের সপ্তপদী এবছর বাংলা সিনেমার শতবর্ষ উজ্জাপন করছে সাথে রয়েছে রকমারি সুস্বাদু একশ বছরের পুরনো রেসিপি। রয়েছে লিচু লংকার শরবত। পুজোর জন্য রয়েছে দুরকমের থালি। সুপারহিট থালিতে আছে ভাত/পোলাও, ভেটকি চিংড়ি মুচমুচে, লেবু লঙ্কা মুরগী আলু ভাজা, চইঝাল দিয়ে চিকেন বা মাটন এবং শেষে চাটনী, পাপর ও মিষ্টি। স্পেশাল ব্লকবাস্টার থালিতে এসব ছাড়াও থাকবে ইলিশ এবং চিংড়ি। খরচ মাথাপিছু ৭৫০ টাকা এবং ১০০০ টাকা।
১০) যারা শহরের ভিড়ভাট্টা পছন্দ করেন না তাদের জন্য রায়চক অন গ্যাজ্ঞেস এর সোনার তরী নিয়ে এসেছে পুজো স্পেশাল থালি। সাদা ভাত আর ঘি দিয়ে শুরু করে রয়েছে লুচি আলুরদম, বাসন্তী পোলাও, নানারকম ভাজা, আলু সেদ্ধ, ডাল সেদ্ধ, ছোলার ডাল, শুক্ত, চপ, মাছের কালিয়া, পাবদা মাছ, চিকেন, মাটন, চাটনী, পাপর, রসগোল্লা, মিষ্টিদই, পায়েস এবং সবশেষে মিষ্টিপান। খরচ মাথাপিছু ৯০০ টাকা+ট্যাক্স নিরামিষ থালি এবং ১৬০০ টাকা+ট্যাক্স আমিষ থালির জন্য।
তাহলে আর দেরী নয়, ঝটপট প্ল্যানিংটা সেরে ফেলুন নাহলে কিন্তু সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।
ছবি : সংগ্রাম পাল
Facebook Comments