দুই-একটি বিক্ষিপ্ত সহিংসতা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হল আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র ও বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। মঙ্গলবার সকাল ৭ টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ এবং কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তা শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। গণনা আগামী ১৬ এপ্রিল, শনিবার।
আসানসোলে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং জাহাজ মন্ত্রী তথা অভিনেতা ৭৬ বছর বয়সী শত্রুঘ্ন সিনহা। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী ও দলের বিধায়ক, নারী ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল এবং বাম প্রার্থী পার্থ মুখার্জী। উল্লেখ্য, এই কেন্দ্রে মোট আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অন্যদিকে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মোট দশজন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হল এদিন। এর মধ্যে প্রধান লড়াই ছিল তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা গায়ক ৫১ বছর বয়সী বাবুল সুপ্রিয়, বিজেপির কেয়া ঘোষ এবং সিপিআইএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম’এর মধ্যে।
উল্লেখ্য আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলের যোগ দেওয়ার কারণে সেখানে উপনির্বাচন জরুরি হয়ে পড়ে। অন্যদিকে গত নভেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বালিগঞ্জ কেন্দ্রের জয়ী তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর কারণে সেখানেও উপনির্বাচন হয়।
আসানসোলে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৫ লাখ, ভোট নেওয়া হয় ২,১০২ টি বুথে। অন্যদিকে বালিগঞ্জে মোট ভোটার প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার, বুথ ছিল ৩০০ টি। দুইটি কেন্দ্র মিলিয়ে মোট ১৩৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। এছাড়াও ছিল মাইক্রো অবজারভার, লাঠিধারী পুলিশ। ক্যুইক রেসপন্স টিম।
এদিন ভোট শুরুর পর পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বারাবনিতে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। এমনকি তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও স্থানীয় বিজেপি নেতা অরিজিত রায়ের ওপরও তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠে। তাদের গাড়িবহর লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশ সবকিছু জানা সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন অগ্নিমিত্রা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে সেখানকার পরিস্থিতি। যদিও এব্যাপারে তৃণমূলের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা জানান তিনি কিছুই জানেন না। পরে অবশ্য এই ঘটনায় জড়িত দুইজনকে আটক করে আসানসোল পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ।
জামুরিয়ার মন্ডল সভাপতি ও ১৮২ নম্বর বুথে বিজেপি এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে বাম প্রার্থী পার্থ মুখার্জীর অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গায় তাদের দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টকে মারধর করে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এই কেন্দ্রের বারাবনিতে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন।
অন্যদিকে দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় অভিযোগ করেন, তাকে বুথের ভিতর ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার, বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষের অভিযোগ, কিছু কিছু বুথে বিজেপির এজেন্টদের বসতে না দেওয়া, বয়স্ক ভোটারদের বুথের ভিতর ঢুকতে না দেওয়া ইত্যাদি। পাশাপাশি, বুথের ভেতর রাজ্য পুলিশের কর্মীদের বসে থাকতে একসময় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি।
ওদিকে সিপিআইএম প্রার্থী সায়রা হালিমের অভিযোগ, এই কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি বুথে ভিভিপ্যাট মেশিন খারাপ হওয়ার কারণে ভোট গ্রহণে বেশ খানিকটা বিলম্ব হয়। এই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী কামরুজ্জামান চৌধুরীর অভিযোগ, বুথ জ্যামের খবর পেয়ে বেনিয়াপুকুর বিদ্যাপীঠে যাওয়ার পরই তার ওপর তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়।
এদিকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবারও নিজের ভোট দিতে পারলেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে তার স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও কন্যা সুচেতনা ভোট দিয়েছেন পাঠভবন হাইস্কুলে। এই রাজ্যের পাশাপাশি গোটা দেশে আরও তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রেও এদিন উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এগুলি হল বিহারের ‘বোচাহন’ বিধানসভা কেন্দ্র, মহারাষ্ট্রের ‘নর্থ কোলাপুর’ বিধানসভা কেন্দ্র এবং ছত্তিশগড়ের ‘খৈইরাগড়’ বিধানসভা কেন্দ্র। বোচাহান কেন্দ্রে জয়ী বিধায়ক ছিলেন ‘বিকাশশীল ইনসান পার্টি’র (ভিআইপি) মুসাফির পাসওয়াল, নর্থ কোলাপুর কেন্দ্রের জয়ী বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেসের চন্দ্রকান্ত যাদব এবং ‘খৈইরাগড়’ কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন ‘জনতা কংগ্রেস ছত্তিশগড়’ (জেসিসি-জে) দেবরত সিং। কিন্তু তিনটি কেন্দ্রেই জয়ী প্রার্থীদের মৃত্যুর কারণে ওই কেন্দ্রগুলিতে উপনির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়ে।
Facebook Comments