মকর সংক্রান্তির দিন গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গনে আজ বিকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানালেন, যে এবারের মেলায় আগত পুণ্যার্থীদের বিচারে সর্বকালের রেকর্ডকে ভেঙ্গে দিল। আজ বিকেল ৩টে পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত পূণ্যার্থীদের সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে গেলো। যা সর্বকালের রেকর্ড।
ঐতিহ্যগতভাবে, প্রতি বছর মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে, লক্ষ লক্ষ ভক্ত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ 24 জেলার গঙ্গাসাগরে পবিত্র স্নান করতে এবং কপিল মুনি মন্দিরে প্রার্থনা করতে আসেন।
পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেছেন, “এ বছর গঙ্গা সাগরে আসা ভক্তের সংখ্যা এক কোটিরও বেশি। ভক্তরা কপিল মুনি মন্দিরেও প্রার্থনা করেন।
প্রবীণ মন্ত্রী কুম্ভমেলার মতো গঙ্গা সাগর মেলাকে ‘জাতীয় মেলা’র মর্যাদা দেওয়ার রাজ্য সরকারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। গত সপ্তাহে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠি লিখেছিলেন।
আধিকারিক বলেছিলেন যে পবিত্র স্নান গ্রহণকারী ভক্তদের সঠিক সংখ্যা সন্ধ্যায় পাওয়া যাবে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘন কুয়াশার কারণে সোমবার প্রায় ছয় ঘণ্টা গঙ্গাসাগরে ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়।
“ঘন কুয়াশার কারণে, সোমবার সকাল 3:30 টা থেকে 9:40 টা পর্যন্ত ফেরি পরিষেবা প্রভাবিত হয়েছিল,” সুন্দরবন পুলিশের জেলা আধিকারিক জানিয়েছেন। নিরাপত্তার কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ফেরি চলাচল স্থগিত করা হয়েছে।তিনি বলেন, এর ফলে কচুবেড়িয়া থেকে ৮ নম্বর লট পর্যন্ত চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও নিশ্চিত করেছেন যে দৃশ্যমানতা উন্নত হওয়ার পরে ফেরি পরিষেবা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
এত বিপুল সংখ্যক ভক্তের সমাগম হওয়ায় সাগর দ্বীপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার।
রাজ্য পুলিশ ছাড়াও, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ), রাজ্য বিপর্যয় প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এসডিআরএফ) এবং কোস্ট গার্ডের কর্মীরা যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোতায়েন করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও সেখানে রাখা হয়েছে।
গঙ্গাসাগরের মেলার ইতিহাসে পুণ্যার্থী আগমনের হিসাবে এইবছর কার্যত সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে দিয়েছে। মেলায় এই প্রথম ১ কোটিরও বেশি পুণ্যার্থী আসার রেকর্ড যেমন হয়েছে তেমনি এই মেলা এবার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা হিসাবেই উঠে এসেছে। যদিও কেন্দ্র সরকার এই মেলাকে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি দিতে নারাজ। কার্যত সেখানেও কেন্দ্রের তরফে বাংলাকে বঞ্চনার রেগর্ড গড়ছে মোদি সরকার।
গত কয়েকদিন কনকনে ঠান্ডায় কাবু গোটা সাগরদ্বীপ। মকরসংক্রান্তির দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভোর হতে না হতেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে বেলাভূমি। দৃশ্যমানতা একেবারে কমে যায়। উত্তুরে হাওয়ার দাপট ও হাড় কাঁপানো ঠান্ডাতেও অবশ্য পুণ্যার্জনে আসা তীর্থযাত্রীদের উত্সাহে ভাটা পড়েনি। কাঁপতে কাঁপতে ঠান্ডা জলে ডুব দেন সবাই। গোটা মেলা চত্বর কালো মাথার থিকথিকে ভিড়ে ঢাকা পড়ে। সকালের দিকে কুয়াশার দাপট এতটাই যে, ১০০ মিটার দূর পর্যন্ত কিছুই দেখা যায়নি। কুয়াশার কারণে অনেকে আত্মীয় পরিজনদের হারিয়ে ফেলেন। বিচে কর্তব্যরত সাগররক্ষীরা হ্যান্ডমাইকে নিখোঁজদের নাম ঘোষণা করে ডাকাডাকি শুরু করেন। তবে স্নানে কোনও বিঘ্ন ঘটেনি।
গতকাল বেলার দিকে মেলায় লোক সমাগম কিছুটা কমে যায়। তবে দুপুরের পর ফের ভিড় আছড়ে পড়ে প্রতিটি বিচে। রাতেও চলে স্নান। ভিড়ের নিরিখে রেকর্ড গড়ার দিনই গঙ্গাসাগরকে কেন জাতীয় মেলা হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, এই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সন্ধ্যা থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে শুরু করে গঙ্গাসাগর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দুমেলা হয়ে উঠেছে। মেলায় আসা সব পুণ্যার্থী একবাক্যে স্বীকার করেছেন মেলায় আসাযাওয়ার পথে এবং মেলার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যই মেলায় পুণ্যার্থীদের আগমন দেশি হয়েছে। সুবন্দোবস্তের জন্যই মানুষ বেশি করে মেলায় আসতে পেরেছেন। আর সেই ব্যবস্থা করার কৃতিত্ব তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের। কেন্দ্র এই মেলার আয়োজন নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিন্দুমাত্র সাহায্য না করলেও রাজ্য সরকার এই মেলার আয়োজনের জন্য যেমন এই বছর ২৫০ কোটি টাকা খরচ করেছে তেমনি মেলায় আসান প্রত্যেক পুণ্যার্থীর জন্য ৫ লক্ষ টাকার বিমার ব্যবস্থাও করেছে। কার্যত মমতার সরকারের হাত ধরেই আজ দেশের দ্বিতীয় হিন্দুমেলা এবং ১ কোটি পুণ্যার্থী আসার জোড়া মাইলফল স্পর্শ করেছে গঙ্গাসাগর।
Facebook Comments