১৪ই ডিসেম্বর তিনদিনের জন্য উত্তরবঙ্গ সফরে এসে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি এবিপিসি ময়দানে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা। আজ জনসভায় প্রথমেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, ‘পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার মানুষ ১০০% সরকারি পরিষেবা পান, পাশাপাশি, জলপাইগুড়ির ৯৫% মানুষ সম্পূর্ণভাবে সরকারি পরিষেবা পান। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের এই দুই জেলায় সর্বাধিক উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “সবরকম উন্নয়ন করেছি।” দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে নেত্রী বলেন যে, ‘উত্তরবঙ্গের মানুষের বরাবরেরই একটি হাইকোর্ট তৈরির দাবী ছিল, সেই দাবীকে সামনে রেখেই জলপাইগুড়িতে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। নেত্রী বলেন, উত্তরকন্যা তৈরি এই জেলাতে, বেঙ্গল সাফারি তৈরি করা হয়েছে, পাশাপাশি, আলিপুরদুয়ারে মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির কাজ খুব শীঘ্রই শুরু করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হবে। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার এই দুই জেলায় উদ্বাস্তু কলোনিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের উন্নয়নকল্পে পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরি হচ্ছে।’
এদিন তিনি ময়নাগুড়ি ও ফালাকাটাকে পুরসভা এবং বানারহাট ও ক্রান্তিকে ব্লক ঘোষণা করেন। এছাড়াও, তফসিলি ভাইবোনেরা, আদিবাসী ভাইবোনেরা যারা ৬০বছরের পর পেনশন পান না, দুয়ারে সরকার প্রকল্পে গিয়ে তাঁদের নাম নথিভুক্ত করার আর্জি জানান তিনি। সেইসাথেই যারা স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পান না তাদের ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পে যাওয়ার আবেদন করেন তিনি। কৃষকদের উদ্দশ্যে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের ঘোষণা করেন, যেখানে কৃষকদের অর্থনৈতিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়। আবার, চা সুন্দরী প্রকল্পের ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেই প্রকল্পে চাবাগানের ৩৭০ চা শ্রমিককে পাকা বাড়ী দেওয়া হবে। বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের ভাতা ও বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে রয়েছে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ। তৃণমুল ক্ষমতায় আসার পর রাজবংশী ও কামতাপুরী ভাষার সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছে। রাজবংশী ডেভেলপমেন্ট অ্যাণ্ড কালচারাল বোর্ড গঠন করে দিয়েছে, যার সদর দপ্তর রয়েছে কোচবিহারে। কাজ শুরু করার জন্য মোট ২৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
এরপরে এনআরসি ইস্যু সহ একাধিক বিষয় নিয়ে বিজেপির উদ্দেশ্যে কামান দাগেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিজেপি সবচেয়ে বড় ডাকাত “, “বিজেপির প্রতিশ্রুতি মানেই প্রতারণা, ২০১৪তে ২কোটি মানুষকে বছরে চাকরি দেওয়ার কথা ছিল, ১৫লক্ষ টাকা অ্যাকাউন্টে দেওয়ার কথা ছিল, দিয়েছে?’ এনআরসি ও এনপিআর-এর মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে?প্রশ্ন তোলেন তিনি। গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে নেত্রী বলেন, ” পাহাড়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান করব আমরাই। বিজেপি দার্জিলিং ও তরাই-ডুয়ার্সে শুধু গুণ্ডামি ও মারপিট লাগানোর চেষ্টা করে। এসব আর করতে দেওয়া হবে না। ওরা কখনও পাহাড়ের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। বিমল গুরুং নিজের ভুল বুঝতে পেরে হাত মিলিয়েছে তৃণমুলের সঙ্গে। বিজেপি পাহাড়বাসীর সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছু করেনি।মিথ্যে প্রতিশ্রুতি তৃণমুল দেয়না। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দার্জিলিং দার্জিলিংয়ের মতো ভাল থাকবে। তরাই-ডুয়ার্স তরাই-ডুয়ার্সের মত ভাল থাকবে। একদিকে পাহাড় ও অন্যদিকে জঙ্গল। দুটো জায়গাই প্রকৃতির গর্ব।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এত কাজ করে উত্তরবঙ্গে লোকসভা ভোটে একটাও আসন পেলাম না, কিন্তু বিধানসভায় চাই, বিধানসভা ভোটে আপনাদের আশীর্বাদ চাই।’ নেত্রী আরও বলেন, ” বাংলাকে গুজরাত বানাতে দেব না।”
এদিনের মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। এদিনের সভায় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক, গৌতম দেবসহ প্রমুখ নেতা মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
Facebook Comments