পোস্ট আর গুজবের জেরে শহর কলকাতার মুরগির মাংস ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। আর এই ভাইরাস নিয়ে ছড়িয়ে পড়া গুজব আর নানানতর ভুয়ো পোস্টের জেরে একধাক্কায় শহরে মুরগির মাংসের বিক্রি কমল ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। মুরগির মাংস বিক্রেতারা নিজেরাই মানছেন যে, এই ধরনের গুজব ছড়ানোর কোনও অর্থ হয় না। এক বিক্রেতা বললেন, ‘আমরা কাস্টোমারদের বোঝানোর চেষ্টা করছি, বিশেষ করে যাঁরা আমাদের রোজের খদ্দের। সোশ্যাল মিডিয়ায় যা পড়ছেন তার কিছুই সত্যি নয়। ওগুলো সবই গুজব। আমাদের বিক্রিবাট্টা তলানিতে এসে ঠেকেছে।’
পাশাপাশিই সেই বিক্রেতা এ কথাও মনে করালেন যে, বার্ড ফ্লু-র সময়েও এমনতর কাণ্ড ঘটেছিল। পশ্চিমবঙ্গ পোল্ট্রি ফেডারেশনের ডেনারেল সেক্রেটারি মদন মোহন মাইতি বলছেন, ‘বিগত পাঁচ দিনে মুরগির মাংসের বিক্রি প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। তার সঙ্গে দামও কমেছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ।’ মদন মোহন আরও যোগ করে বললেন, ‘এমনতর গুজব ছড়ানোর কারণে পোল্ট্রির ডিম এবং মাংস বিক্রিতে যে ভাঁটা পড়েছে তার কারণে ৩০০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হতে চলেছে। গত মাসের তুলনায় এই মাসের মুরগির মাংসের হোলসেল দাম প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে।’ শহর কলকাতার এক সপ্তাহে প্রয়োজন ৬০ লক্ষ কেজি চিকেন যা গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৮.৬ লক্ষ কেজি। আর গুজবের কারণে শহরের মানুষের সাপ্তাহিক চাহিদা হয়েছে ২৪ লক্ষ কেজি। প্রাত্যহিক গড়পড়তা হিসেবে ৩.৫ লক্ষ কেজি। লেক মার্কেট এলাকার আর এক ব্যবসায়ী সত্যজিত সিংহ বলছেন, ‘প্রতিদিন আমি ভাবি বিক্রিবাট্টা আর কতটা কমবে!
গত ১৫ দিনে আমার দোকানে প্রায় ৩০ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছে। গোটা চিকেন এখন আমি ৮০ টাকায় বিক্রি করছি, যা কয়েক দিন আগেও ১০০ টাকায় বিক্রি করেছি।’ একই কথা শোনা গেল মানিকতলার মুরগির মাংস বিক্রেতা সুধাকর ধালির গলাতেও। বললেন, ‘এই তো কিছু দিন আগেও দিনে ৪০০-৫০০ কেজি মাংস বিক্রি করতাম। সেটাই এখন এসে দাঁড়িয়েছে সর্বসাকুল্যে ৩৫ কেজিতে।’ মানিকতলা মার্কেট কোম্পানির জয়েন্ট সেক্রেটারি বিজয় সাহুর কথায়, ‘করোনা ভাইরাস নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেমক্কা গুজব ছড়ানোর ফলেই মানুষের মনে অহেতুক আতঙ্কের উদ্ভব হচ্ছে। আর তার প্রভাব এসে পড়ছে সোজা আমাদের ব্যবসায়।’ তবে কিছু শহরাবাসী আবার গুজবে কান দিচ্ছেন না। গৃহবধূ জয়তী মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘এটা গুজব বলেই মনে হচ্ছে। তবে আমি চিকেন এখন আর কিনছি না।
Facebook Comments