অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করার কর্মসূচিতে স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এখন, 5 আগস্ট রাজ্যের সমস্ত ব্লক স্তরে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করার কর্মসূচির জন্য অভিষেকের ডাক এই মুহূর্তে হচ্ছে না। ২১শে জুলাই বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করার মঞ্চ থেকে ঘোষণা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে বিজেপি। অভিষেক ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীও। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবগনামের বেঞ্চের সামনে বিষয়টি শুনানির জন্য আসে। এ বিষয়ে শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি বলেন, কেউ যদি বলে আগামীকাল হাইকোর্ট ঘেরাও করা হবে, সরকার বা পুলিশ কি কোনো ব্যবস্থা নেবে না? কেউ যদি বলে কোথাও বোমা রাখা আছে, সরকার বা পুলিশ কি কোনো ব্যবস্থা নেবে না?
21 জুলাই, ধর্মতলাতে তৃণমূলের শহিদ স্মৃতি সমাবেশের মঞ্চে অভিষেক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে 100 দিনের জন্য তহবিল আটকে রাখার অভিযোগ তোলেন। তার ভিত্তিতে তিনি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতাদের বাড়িঘরে ঘেরাও করার আহ্বান জানান। তৃণমূল সমর্থকদের উদ্দেশে অভিষেক বলেছেন, “৫ অগস্ট, সমস্ত বুথ, এলাকা, ব্লক, জেলা এবং রাজ্য স্তরের বিজেপি নেতাদের বাড়িতে শান্তিপূর্ণভাবে ঘেরাও করা উচিত। তবে বাড়িতে যদি কোন বয়স্ক লোক থাকে তবে তাকে ছেড়ে দিন। বিজেপি নেতারা ঘর থেকে বের হবেন না ঘরে ঢুকবেন না। কিন্তু একই সঙ্গে দলের সদস্যদের সতর্ক করে অভিষেক বলেন, ‘তবে কারও গায়ে হাত তুলবেন না। প্রথমে গণঘেরাও কর্মসূচি হবে। এরপর দিল্লি অবরোধ করা হবে।
যদিও পরে মমতা সেই মঞ্চে অভিষেকের অনুষ্ঠানকে সমর্থন করতে গিয়ে কিছুটা বদলে যান। তিনি বলেন, “প্রোগ্রাম হবে ব্লক স্তরে। আর প্রতীকীভাবে ঘেরাও করা হবে বিজেপি নেতাদের বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে। সোমবার এই মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, একজন সাংবিধানিক কর্মকর্তার কাছ থেকে এমন মন্তব্য আশা করা যায় না। ঘেরাও নিয়ে এজলাসে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।
24 জুলাই মমতা ও অভিষেকের এই মন্তব্য নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে বিজেপি। এর আগে, 22 শে জুলাই রাতে, রাজ্য বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় তৃণমূল নেত্রী মমতা এবং তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের বিরুদ্ধে একটি ইমেল অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সোমবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এ মামলার শুনানি হয়।
শুনানিতে প্রধান বিচারপতি প্রথমে জানতে চান অভিষেকের ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি পাবলিক প্রসিকিউটরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে রাজ্য সরকার বা পুলিশ প্রশাসন অবরোধের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা। কিন্তু সে প্রশ্নের কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি সরকারি আইনজীবী। এরপর প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “অনেকে একসঙ্গে সংসদ ঘেরাও করার কথা বলছেন, প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার বা পুলিশ কি কোনো ব্যবস্থা নেবে না? তার কি কোনো ভূমিকা নেই? কেউ যদি বলে হাইকোর্টে দুদিন পর ঘেরাও করা হবে, পুলিশ বা প্রশাসন কি কোনো ব্যবস্থা নেবে না?
এই বিষয়ে 21শে জুলাইয়ের সমাবেশের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এমনকি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের শহীদ স্মৃতি সমাবেশের জন্যও স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি বলেন, “সেদিন আদালতের কাজ মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল, ওই সেশনে অনেক আইনজীবী ও বিচারক আদালতে পৌঁছাতে পারেননি। আদালতে যারা এসেছেন তাদের বাড়ি ফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে এ বিষয়ে আবারও শুনানি হবে।
সোমবার আদালতের এই আদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু। তিনি বলেন, “আমি আদালতের এই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশকে স্বাগত জানাই। আদালত কঠোরভাবে এই অগণতান্ত্রিক কর্মসূচিকে দমন করেছে। আগামী দিনেও যেকোনো অসাংবিধানিক কাজের বিরুদ্ধে আদালতে যাব। আর আশা করা হচ্ছে, আদালতের এই আদেশের পর খালা-ভাতিজা এ ধরনের অসংসদবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
Facebook Comments